শীতের দিন এখানে খুবই ছোট্ট, আর ডিসেম্বরের শুরুতেই তুলুসের রাস্তা, অলি গলি গুলো সেজে ওঠে ঠাণ্ডা নরম এক আলোয়, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই উজ্জ্বল নরম আলোয় ছেয়ে যায় তুলুসের রাস্তা। ঠাণ্ডা বাতাস, জমাটি ঠাণ্ডা পরিবেশ, ছোট্ট দিনের তেড়ছা রোদের নরম আলো, অতি তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা নামা, আলোয় সাজানো রাস্তা, শুকনো গাছের ডাল, শুকনো পাইন ফল, লতা পাতা দিয়ে সাজানো দোকান – সবই যেন বলে দেয় ক্রিসমাস আসছে।
দেখেছি, প্রতিটি উৎসবের সময় বাতাস যেন বদলে যায়, মানুষের চলার লঘু ছন্দেও যেন লাগে উৎসবের আমেজ। সুপার মার্কেট গুলো ঢেলে সেজে ওঠে ক্রিসমাসের সাজে। আর শীতের ছোট্ট দিন যদি মেঘলা ধূসর থাকে, দিনের বেলাই সন্ধ্যে নামে তুলুসের গলিতে – রাস্তার পাশের সাজানো ঠাণ্ডা আলো দেখতে দেখতে অনুভব করে নিতে হয় এই বিদেশী উৎসবের ছোঁয়া। তবে, ফ্রান্সে ক্রিসমাস মানে খুবই শান্ত, ঘরোয়া এক উৎসব। অবশ্য ফরাসীদের কাছে ক্রিসমাস মানেই খাওয়া দাওয়ার এক উৎসব।
তুলুসের এদিকে ফরাসীরা জাঁক জমক, বা খুব বেশী আলোর রোশনাই ছাড়াই ক্রিসমাস পালন করে, বিশেষ করে তুলুসে দেখেছি ক্রিসমাসে অনেকেই আলো দিয়ে ঘর সাজায় না – কারণ, অনেকেই ফ্রান্সের নিউক্লিয়ার পাওয়ারকে অহেতুক খরচ করতে চায় না। এখানে গ্রামের দিকে নাকি এমনও অনেকে আছে যারা কিনা ঘর গরম করার জন্যে আজও কাঠের আগুন জ্বালায় – এতোই এরা পরিবেশ সচেতন। অবশ্য তুলুস শহর কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট পরিমানেই আলো দিয়ে শহর সাজায়, শহরের প্রতিটি কোণাই যেন বলে – ক্রিসমাস আসছে। তাই বোধহয়, নিজের বাড়ীর সামনে আর আলাদা করে কেউই প্রায় অহেতুক আলো দিয়ে সাজায় না। অবশ্য ইউরোপের যতই উত্তরের দিকে যাওয়া ক্রিসমাস খুবই উজ্জ্বল, আলোকিত।
তবে, আলো সাজানোর বহর যাই হোক না কেন – উৎসব তো প্রানের, প্রানেই তো লাগে আনন্দের ছোঁয়া, আর ইউরোপের প্রধান উৎসবে সবার প্রানে ছোঁয়া লাগবে না তা কি হয়। তাই, ডিসেম্বরের শুরুতেই তুলুসের নানা জায়গায় বসে যায় ক্রিসমাস বাজার – মার্সে দে নয়েল।
হালকা নরম গরম রোদ পিঠে নিয়ে শীতের দুপুরে ক্রিসমাস বাজারে ঢুঁ মারা, গরম ওয়াইন কিনে খাওয়া, নানান ধরণের হাজার জিনিসের ভিড়ে ক্রিসমাস মেলায় হারিয়ে যাওয়াই তো তুলুসের ক্রিসমাসের আনন্দ। আর এই আনন্দ মেলায় সবারই খোলা নিমন্ত্রণ – ক্রিসমাস স্পিরিট! তুলুসের ক্রিসমাস বাজারে মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যেতে যেতে, উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠা হাসিখুশি মানুষের অচেনা মুখের ছবি দেখতে ভালো লাগে। দেখি এই সময়ে কতো ছোট হাসি, ছোট সুখ মানুষের জীবনকে ভরিয়ে তোলে, হয়তো সেটাই যে কোন উৎসবের যাদু, জীয়নকাঠি।