অষ্ট্রিয়ার সেলজবার্গ শহরটির নাম শুনলেই মনে হয়, যেন তুষার ধবল পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনি হয়ে চলে অপূর্ব সঙ্গীত সুর, উদার স্বচ্ছ উজ্জ্বল পাহাড়ি দিনের এক ঝলমলে ছবি ভেসে ওঠে মানস চক্ষে। সত্যিই কি এই ঐতিহাসিক শহরের বুকে কান পাতলে শোণা যায় সঙ্গীত সুর? এপ্রিলের উজ্জ্বল ছুটির দিনে তাই সেলজবার্গ এসে মানসচক্ষের সেই উজ্জ্বল ছবিটি মিলিয়ে নিতে চেয়েছি। না, সেলজবার্গ বিমুখ করে নি। অপূর্ব এই মধ্যযুগীয় শহরটি, শরীরে মধ্যযুগীয় সমস্ত গাম্ভীর্য বজায় রেখেই স্বাগত জানায় আজকের টুরিস্টদের। আব্যে, চার্চ, চ্যাপেল, ক্যাথিড্রালে ভরা এই গম্ভীর শহরে কান পাতলে সত্যি শোণা যায় অপূর্ব সুর ধ্বনি, পাহাড়ের গায়ে হয়তো বা প্রতিধ্বনি রূপে অনন্ত কালের জন্যে সংরক্ষিত হয়ে আছে সেই সুর।
ঐতিহাসিক শহর কেন্দ্র থেকে দূরে পাহাড়ের উপরে দেখা যায় – এগারো শতাব্দীতে তৈরি সেলজবার্গ ক্যাসল ‘Hohensalzburg’ ক্যাসল বা জার্মানি ভাষায় Festung Hohensalzburg বলেও অনেকে জানে। ইউরোপের মধ্যে অন্যতম মধ্যযুগীয় বিশাল এই ক্যাসল দেখতে প্রতি বছর নানা দেশ থেকে প্রচুর টুরিস্ট সেলজবার্গ শহরে পা রাখে। ফুনিকুলার বা কেবল কার ‘Festungsbahn’ ধরে পৌঁছে যাওয়া যায় ক্যাসলের একদম দোরগোড়ায়। অবশ্য পাহাড়ি পথে হেঁটে উপরে যাওয়ারও রাস্তা আছে।
ইতিহাসের অনেক চড়াই উৎরাই, ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়েও এই ক্যাসল এখনো অক্ষত, সুরক্ষিত, সংরক্ষিত। মধ্যযুগীয় এই ক্যাসলে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় ইতালির যুদ্ধ বন্দীদের রাখা হোতো। ক্যাসলের অস্ত্র সাজানো ঘর, গোল্ডেন চেম্বার, বেড চেম্বার, রাজকীয় রান্না ঘর, এ ঘর, ও ঘর, নানা ঘর ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে চলে আসি এক বিশাল উজ্জ্বল পাথরে বাঁধানো উঠোন চত্বরে। উজ্জ্বল দিনে, হলুদ দুপুরের এক টুকরো নস্টালজিক রোদ এখনো থমকে আছে উঠোনের গাছের কাছে। অনেকেই গাছের ছায়ায় পায়ের বিশ্রাম দিচ্ছে, জিরিয়ে নিচ্ছে। মধ্যযুগীয় ক্যাসলের পাথুরে উঠোনে এক নিশ্চিন্ত জীবনের আধুনিক ছবি – এখানে ইতিহাস, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব যেন মিলে মিশে একাকার।
ক্যসলের বিশাল ছাদে এসে পুরো সেলজবার্গ শহরের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে কতো উচ্ছ্বসিত ধ্বনি শুনতে পাই আশেপাশের টুরিস্টদের মুখে। দেখে মনে হয়, সত্যি প্রকৃতি যেন সমস্ত রূপই ঢেলে দিয়েছে এই অস্ট্রিয়ান শহর সেলজবার্গের উপরে।
এপ্রিলের ফুরফুরে উজ্জ্বল দিন, মধ্যযুগীয় ক্যাসলের ছাদ, দূরে আল্পস পাহাড় শ্রেণীর রেখা, নীচের ঐতিহাসিক সেলজবার্গের স্থাপত্য, ক্যাসলের পাশে নীচে বয়ে চলা Salzach নদী – সব মিলিয়ে এক স্বপ্ন ময় সুন্দর পরিবেশ তৈরি করেছে। পৃথিবীতেই আবার ফিরবো কিনা, বা ফিরলেও এখানে আসবো কিনা জানি না, তাই যা কিছু সুন্দর, অপূর্ব সবই এই জন্মের স্মৃতির কোঠায় বন্দী করে নি, দু’চোখ ভরে দেখি, আর অপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে রই।