বেশী দিন আগের কথা নয়, আমাদের মফঃস্বল শহরের সেই গলির মোড়ে টাইপ রাইটার শেখানোর এক স্কুল ছিল – ছেলেবেলায় কখনো ছুটির দুপুরে ঐ স্কুলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে টাইপ রাইটারে টাইপ করার আওয়াজ পাওয়া যেত – একদল যুবক যুবতী মনোযোগ দিয়ে টাইপ করে যেত – দ্যা কুইক ব্রাউন ফক্স জাম্পস ওভার দ্যা লেজি ডগ।
ছুটির দুপুরের নিস্তব্ধতা চিরে দিত টাইপরাইটারের সেই খট খট আওয়াজ। তারপর তো শুরু হয়ে গেল কম্পিউটারের বিশ্ব জয়ের কাহিনী – টাইপরাইটার শেখানোর সেই স্কুল কবেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর টাইপরাইটার গুলোও সময়ের যাত্রায় মুখ লুকিয়ে ফেলেছিল। যে কয়েক জন পুরনো পন্থী টাইপরাইটার আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করছিল – অবশেষে তারাও হাল ছেড়ে দিয়েছিল।
না, আমাদের প্রজন্মকে আর ঐ টাইপরাইটারের স্কুলে যাওয়ার দরকার হয় নি – আরও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আমাদের সামনে। সে যাইহোক, সেই বাতিল হয়ে যাওয়া টাইপরাইটার গুলো গেল কোথায়? যারা টাইপের কাজ করতো তাদের কি হল – সে নিয়ে ভাবার অবসর কারোর ছিল না। আর সেই পুরনো ভুলে যাওয়া মলিন টাইপরাইটারের সঙ্গে ফ্রান্সের তুলুস শহরের এক এন্টিক বাজারে দেখা হয়ে যাবে – সে কখনো স্বপ্নেও ভাবা যায় না।
আসলে আমাদের প্রজন্মের চোখের সামনে টাইপরাইটারের হারিয়ে যাওয়াটা সভ্যতার ইতিহাসের এক প্রতীক – এ যেন এক নতুন দিকে ইঙ্গিত দেয় । আমাদের এই সময়টা যেন বলে – সারভাইভাল অফ দ্যা ফিটেস্ট শুধু নয় – সারভাইভাল অফ দ্যা ফাস্টেস্ট, সারভাইভাল অফ দ্যা অটোমেশন। মেশিন ও মানুষের এই দ্রুততার সম্পর্কের শেষ কি – কেউই জানে না, কিন্তু, মানুষ চায় তার মেশিন নিজেই ভাবুক, নিজেই কাজ করুক, সম্পূর্ণ অটোম্যাটিক হয়ে যাক। তারপর কি হবে কে জানে।
সে যাই হোক, তুলুসের এন্টিক বাজারে যে আজও মানুষের বহু স্মৃতি বিজড়িত ঐ টাইপরাইটার স্থান পেয়েছে – তা দেখে হঠাৎই চোখে বহু পুরনো ছবি ভেসে ওঠে। আর মানব সভ্যতার এক অধ্যায় ঐ টাইপরাইটার কে পেছনে ফেলে দ্রুত এগিয়ে যেতে হয়, এই নিয়ম।
darun
Thank you.