আজকের অত্যাধুনিক জেনেভা শহরের যে এক ঐতিহাসিক রূপ থাকতে পারে, জেনেভার একদম কেন্দ্রে যে অতি প্রাচীন, মধ্যযুগীয় অথচ জমজমাট এক স্কোয়ার থাকতে পারে, যে স্কোয়ারকে ঘিরে প্রাচীন স্থাপত্য, পাথরে বাঁধানো গলি পথ থাকতে পারে – তা লেক জেনেভার পাশে জেনেভার আধুনিক অংশ থেকে একদমই বোঝা যায় না।
মধ্যযুগীয় গলি পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে, দুই পাশে পুরনো দিনের ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, স্থাপত্য, এন্টিক দোকানে সাজানো এক একটি পুরনো মাস্টারপিস, প্রচুর টুরিস্ট – এই সব দেখতে দেখতে যে এক প্রশস্ত স্কোয়ারে পৌঁছে যাওয়া যায়, তা জেনেভার এক ঐতিহাসিক কেন্দ্র, কিংবা ঐতিহাসিক স্কোয়ার – যার নাম Place du Bourg-de-Four ।
সামারের বিকেলে এই স্কোয়ারে উপস্থিত স্থানীয় কিংবা বহিরাগত মানুষের মনে থাকে এক ফুরফুরে ছুটি কাটানোর মেজাজ। প্রাচীন কালে, এই জায়গা জেনেভা শহরের পশু কেনাবেচার হাট ছিল।
নবম শতাব্দী থেকে শুরু করে, এই স্কোয়ারের আশেপাশের নানান স্থাপত্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেলেও এই স্কোয়ারের প্রাথমিক চরিত্র নাকি কিছুই বদলায় নি – আজও স্থানীয় মানুষের যাবতীয় কেনাকাটি, বাজার হাট কিংবা এক কাপ কফির কাপে সময় কাটানো ও মানুষ দেখার জায়গা এই স্কোয়ার – তাই, জেনেভার আসল ঐতিহাসিক দিক দেখতে হলে, জেনেভার বিশাল ক্যাথিড্রাল ছাড়িয়ে গলি পথ ধরে একটু হেঁটেই এই স্কোয়ারে আসা চাই। জেনেভার এই ঐতিহাসিক কেন্দ্রে শুধু পায়ে হাঁটার রাস্তাই আছে, তাই শহরের কেন্দ্রে শান্ত ও যানজটহীন এক সুন্দর ছিমছাম জায়গা এই স্কোয়ার।
আর এই স্কোয়ারের কেন্দ্রের এক ঐতিহাসিক ফোয়ারাকে ঘিরে জন জীবন বয়ে চলে। এখানে চাইলে, মধ্যযুগীয় স্টাইলে সাজানো কোন এক ছোট্ট রেস্টুরেন্টে বসে সত্যিকারের সুইস খাদ্য ও সুইস কফির স্বাদ নেওয়া যায় – আসলে জেনেভা শহরে সত্যিকারের সুইস খাদ্যকে প্রায় বিরলই বলা যায় – তাই ফুড ট্রাভেলারদের জন্যে এই জায়গা সত্যিই আকর্ষণীয়। আর প্রেক্ষাপটে থাকে ঐতিহাসিক সুইস বিল্ডিং ও পাথরে বাঁধানো গলিপথ, যে গলিপথ বাঁক নিয়ে ঐতিহাসিক স্থাপত্য গুলোর গায়ে যেন মিলিয়ে যায়। একটু ঢালু ও পাহাড়ি এই শহরের ঐতিহাসিক গলি গুলোর মোড়ে সন্ধ্যা যেন একটু তাড়াতাড়িই নামে। আর সেই প্রাক সন্ধ্যায় জেনেভার ঐতিহাসিক এই স্কোয়ারের জন জীবনের সঙ্গে আমাদের জীবনের কিছু মুহূর্ত, কিছু পথ চলাও মিলেমিশে যায়।