বার বার দেখেছি, বহু রূপে, নানা সাজে দেখেছি। দিনের নানা সময় – সকাল, দুপুর থেকে শুরু করে সন্ধ্যে, রাত কিংবা মাঝ রাতেও দেখেছি, আবার নিঝুম বৃষ্টির সন্ধ্যেতেও নির্জনে একে দেখেছি, শীত বা গরমে যে কোন উৎসব মুখর দুপুরেও দেখেছি – আর যতবারই দেখেছি, আগের থেকে অল্প একটু আলাদা মনে হয়েছে।
তুলুস বসবাসের শুরুর সেই দিন গুলো থেকেই তুলুসের ক্যাপিটল বিল্ডিং ও তার সামনের চত্বরকে দেখে আসছি – তুলুসের মিউনিসিপালিটির অন্তর্গত এই ক্যাপিটল বিল্ডিংকে তুলুসের সিটি হল বললেও বাঁধা নেই।
যদিও বারো শতাব্দীতে ক্যাপিটলের আসল বিল্ডিং তৈরি হয়েছিল, কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে এই স্থাপত্যকে বেশ ভালো ভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিল – অনেক অংশ আবার নতুন ভাবে, নতুন নক্সা দিয়ে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু, শোণা যায় ভেতরের কোন কোন অংশে আজও ষোল শতাব্দীর বহু নিদর্শন বর্তমান।
তাছাড়া, বর্তমানে বাইরে থেকে যে অংশ দেখা যায়, তা তৈরি হয়েছিল আঠারো শতাব্দীতে। নিও ক্লাসিক্যাল স্টাইলে তৈরি আঠারো শতাব্দীর এই গোলাপি কিংবা লাল রঙের স্থাপত্য তুলুসের এক টুরিস্ট গন্ত্যব্যও বটে – একে ঘিরে তুলুসের অন্যান্য বিল্ডিঙের রংও গোলাপি বা লাল – তাই তুলুসের আরেক নাম গোলাপি শহর, ফ্রান্সের গোলাপি শহর বলতে তুলুসকেই বোঝায়। এই ক্যাপিটল চত্বরের এক অংশে তুলুসের অপেরা ও থিয়েটার হলও আছে।
দেখেছি তুলুস শহর কেন্দ্রের এই প্রাচীন চত্বর ও স্থাপত্য কি ভাবে স্থানীয় মানুষের জীবন যাপন সঙ্গে জড়িয়ে থাকে – সে বিশাল স্ক্রিনে তুলুসের সব মানুষ একসঙ্গে মিলে রাগবি খেলা দেখা হোক, কিংবা ক্রিসমাসের বাজার বসা হোক, বা আন্তর্জাতিক ভাষা উৎসব, বুধবারের হরেক রকমের জিনিসের বাজার, সপ্তাহ শেষের যে কোন উৎসব অনুষ্ঠান হোক, লাইট শো হোক, বাৎসরিক সঙ্গীত উৎসব হোক – সব কিছুরই ঠিকানা এই ক্যাপিটল চত্বর।
তুলুস বসবাসের যে কোন ছুটির দুপুরে যখনই মনে হয় কোথায় যেতে পারি – মুহূর্তেই ক্যাপিটল চত্বর ছাড়া অন্য কোন জায়গার কথা যেন মনেও আসে না। আর সেই ক্যাপিটল চত্বরও যেন নিরাশ করতে জানে না – তুলুস বাসীর যে কোন উৎসবের মুখোমুখি হতে পারি। যদি কোন উৎসব নাও থাকে – ক্যাপিটল চত্বরে বসে শুধু মানুষের যাতায়াত দেখতেও মন্দ লাগে না – নানা মানুষের নানান রকম ভাবে সময় কাটানোর ছবি দেখতে দেখতে সময় গড়িয়ে যায়।
যে চত্বরকে বারাবর বাইরে থেকে দেখে এসেছি – ফ্রান্সের রেনেসাঁ যুগে তৈরি এই স্থাপত্যের ভেতরটি ঠিক কেমন হতে পারে, তা জানার কৌতূহল বরাবরই ছিল। তাই, সেবার যখন ক্রিসমাসের সন্ধ্যেতে ক্যাপিটল বিল্ডিঙের ভেতরে যাওয়ার সুযোগ ছিল – ক্যাপিটল বিল্ডিঙের ভেতরে গিয়ে, হলুদ আলোয় সাজানো কোন এক অন্য পৃথিবীর সন্ধান পেলাম যেন। আলো দিয়ে সাজানো বিশাল সিঁড়ি আমাদের এক বিশাল হলের মুখে নিয়ে এলো।
বিশাল হলের ছাদে আঁকা মধ্যযুগীয় ছবি, দেওয়ালে টাঙ্গানো তুলুসের নামী শিল্পীদের ছবি – উনিশ শতাব্দীতে তেল রঙে আঁকা এই ছবি গুলো খুবই দামী – সেই সময়ের তুলুসের জীবন যাপনের এক ঝলক বলা যায়। বিশাল হলের প্রতিটি ঝাড়বাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, হলের এক কোণে সাজানো ক্রিসমাস ট্রি – সব মিলিয়ে ডিসেম্বরের শীতল সন্ধ্যায় এক উষ্ণ উজ্জ্বল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দেখি আমাদের মতো অনেক উৎসুক মানুষই এই ক্যাপিটল বিল্ডিংকে ভেতর থেকে দেখার জন্যে এসেছে। তুলুসের হৃদয়কে খুঁজতে হলে তুলুসের এই হৃদয় কেন্দ্র ক্যাপিটল বিল্ডিং ও সামনের ঐ চত্বরে আসতে হবেই।