রোমের টাইবার নদীটির নাম, প্রথম কবে শুনেছিলাম কিংবা পড়েছিলাম, ঠিক মনে নেই, ছেলেবেলার পড়ন্ত দুপুরে, ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসা ইতিহাস ক্লাসে? নাকি ইতিহাস বইয়ের ছেঁড়া পাতায় – একদম মনে নেই। তবে, নদীটির নামের মধ্যেই কেমন যেন এক পুরুষালী ভাব ছিল।
অবশ্য, যে নদী রোমান সাম্রাজ্যের মত বিশাল সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন থেকে শুরু করে ফেসিস্ট নেতা মুসোলিনির উত্থান, শাসন ও পতন, তথা রোমের বর্তমান নিয়তির নীরব সাক্ষী হয়ে আজও বয়ে চলে, যে নদীকে ঘিরে কত হাজার গল্প গাঁথা সেই নদীর নামের মধ্যে পুরুষালী আভিজাত্য থাকবে না – তা কি করে হয়।
যদিও টাইবার রোমের তৃতীয় দীর্ঘতম নদী, কিন্তু, রোমান সাম্রাজ্যের উত্থানের সঙ্গে এই নদীটির নাম এমন অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে আছে, এবং রোমের ইতিহাস ও বর্তমানে এই নদীটির এতোই অবদান, যে রোমে এলে টাইবার নদীকে কিছুতেই উপেক্ষা করা যায় না। সেই রোমান সময়েই নানান সুড়ঙ্গ তৈরি করে রোমানরা এই নদীর জলকে শহরের ভেতরে নিয়ে গিয়ে দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করেছিল। এমনকি, রোমান সময়ে বন্দীদের মৃত্যুদণ্ড দিলে, মৃতদেহ এই টাইবারের জলেই ভাসিয়ে দেওয়া হোতো। এই নদীকে ঘিরে আজও অনেক রহস্য দানা বাঁধে।
রোম ও রোমান ক্যাথোলিকদের জীবন যাপনে, এই টাইবার নদীর এমনি ভূমিকা ছিল যে রোমে এক প্রবাদই তৈরি হয়ে গিয়েছিল – swimming the Tiber বা crossing the Tiber, যারা রোমান ক্যাথোলিক ধর্ম গ্রহণ করতো তাদের জন্যে এই বিশেষ কথাটি ব্যবহার হোতো।
যাইহোক, সাধারণত নদী যে পাহাড় থেকে জন্ম নেয়, সেই পাহাড় নিজেই বিখ্যাত হয়, কিন্তু, টাইবার নদী যে পাহাড় থেকে জন্ম নিয়েছে ‘ Mount Fumaiolo’ সেই পাহাড়, টাইবারের জন্যেই বিখ্যাত। যে দুই ঝর্ণা মিলে টাইবারকে জন্ম দিয়েছে, তাদেরকে ইতালিয়ানরা একসঙ্গে “Le Vene” বলে জানে। ত্রিশের দশকে মুসোলিনি টাইবারের সেই উৎস স্থলে রোমান যুগের এক স্তম্ভ স্থাপন করে লিখেছিল – Here is born the river / sacred to the destinies of Rome, হয়তো, যে নদী রোমের ভাগ্য নির্ধারণ করেছিল, তার উৎস স্থলের সঙ্গে মুসোলিনি নিজেকেও যুক্ত করতে চেয়েছিল।
আর, সেই নদীর তীরের বাঁধানো রাস্তা ধরে হেঁটে যেতে যেতে অনেকের মনে যেমন নানান ঐতিহাসিক প্রশ্ন ভিড় করে, তেমনি জাগে রোমাঞ্চ। প্রাচীন সময়ে এই নদী পথই ছিল রোমের যাতায়াত ব্যবস্থা, রোমের ব্যবসা বানিজ্যের প্রসারও ছিল এই নদী পথ ধরেই। আজও অনেক টুরিস্ট টাইবারের বুকে নৌকো ভাসিয়ে রোমকে দেখে, দেখে সেই বিশাল রোমান সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ। কিংবা, টাইবারের বুকে ভেসে রোমের সেই ঐতিহাসিক সোনালি দিনগুলোর এক টুকরো আভাস পেতে চায়।