ক্যানাল দু মিদির পাশ দিয়ে সবুজ পথে যেতে যেতে নাকে আসে ধোঁয়ার গন্ধ। ক্যানাল দু মিদির জলে সারা বছরই বোট ভাসে, আর পাশের ভাসমান বোটের চিমনীর নির্গত ধোঁয়া বয়ে নিয়ে আসে ফরাসীদের নিশ্চিন্ত জীবন যাপনের সুবাস। নৌকোর মধ্যে ক্যানেলের উপরে ভেসে ভেসে এ কেমন বসবাস, এ কেমন জীবন যাপন, প্রথমে তো আমার ঠিক মাথায় ঢোকে নি, পাশেই গগন চুম্বী অট্টালিকার সারি, অথচ অনেক ফরাসী সেচ্ছায় ক্যানেলের নৌকোয় ভাসমান জীবন বেছে নিয়েছে!
সে এক নিশ্চিন্ত ফরাসী জীবন যাপন। ক্যানালের ভাসমান বোটে বাসা বাঁধা, হ্যামকে ঝুলে বই পড়া, ছবি আঁকা, পাখির কূজন শোণা, কুকুর পোষা, বেড়াল পোষা, প্রকৃতির খুবই কাছে থাকা, সাইকেল চালানো, কারোর কারোর আবার পুরনো দিনের অস্টিন গাড়িও আছে, মাঝে মধ্যেই সেই ভিন্টেজ গাড়ি চালিয়ে শহর থেকে বাজার করে আনা, ভিন্টেজ গাড়ি মেরামত করা – নিশ্চিন্ত, শান্ত এক জীবন যাপন। এখানে অনেকে তো বছরে অন্তত দুই থেকে তিন মাস শহর থেকে দূরে, এই ধরণের জীবন যাপন করে। নৌকোর মধ্যেই রীতিমত সংসার বিছিয়ে বসে।
ক্যানাল দু মিদির বুকে ভাসমান বোট গুলোর আবার ঠিকানাও আছে, চলার পথে গাছের গায়ে আটকানো ছোট্ট লাল ডাকবাক্স নজর কেড়ে নেয়। তুলুসের এই বিখ্যাত ক্যানাল দু মিদির সঙ্গে জলপথে মেডিটেরিয়ান সমুদ্রের যোগ আছে, শুনেছি সামারে ফরাসীরা অনেকেই এই ক্যানাল ধরে মেডিটেরিয়ানে ফিশিং করতে যায় – সঙ্গে আবার বড় বড় পাহারাদার কুকুরও যায়, ছোটখাটো জল দস্যুরা নাকি আজও আছে।
অবশ্য প্রচণ্ড শীত পড়লে নৌকো গুলো প্রায় খালিই পড়ে থাকে। অক্টোবরে পাতা ঝরার মরশুম শুরু হলে ক্যানালের বুকে নানা রঙের নৌকো ও ফরাসী প্রকৃতির অপূর্ব রঙিন রূপ – সব মিলিয়ে অপূর্ব এক ছবি ফুটিয়ে তোলে, তখন কিছুতেই ফরাসী প্রকৃতি থেকে চোখ ফেরানো যায় না।
শীতে, ধীরে ধীরে ক্যানালের দু পাশের সব গাছের সমস্ত পাতা ঝরে গিয়ে, ক্যানাল দু মিদির এক নিঃস্ব রিক্ত ছবি ফুটে ওঠে। হলুদ কমলা শুকনো পাতা বিছানো পথে হাঁটতে হাঁটতে ফরাসী জীবন, ফরাসী প্রকৃতির রং বদল দেখতে দিব্যি লাগে। নৌকোর সামনে পোষা বেড়ালের গুটিসুটি হয়ে নিশ্চিন্ত ঘুমের মধ্যেও এক সুখের ছবি দেখা যায়। ক্যানালের পাশে ছবির মতো দীর্ঘ এই নির্জন রাস্তায় ফরাসী জীবন যাপনের কতো ছবিই না চোখে পড়ে – স্মৃতির পটে জীবনের ছবি কে আঁকিয়া যায় জানি না, তবে যেই আঁকুক সে কেবল ছবিই আঁকে – আর সেই ছবি আঁকতে আঁকতেই যে জীবনের পথে আমাদের পথ চলা।