আগুন আবিষ্কারের আগেই প্রাগৈতিহাসিক মানুষ যা আবিষ্কার করেছিল, তা মনে হয় – দরজা। গুহা মানবরাও তাদের গুহায় নিশ্চয় দরজা দিত, মনে হয়, পাথর দিয়ে গুহার মুখ আটকে দিত – প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো বটেই, নানান পশু পাখির আক্রমণ হতে বাঁচিয়ে প্রাচীন গুহার ভেতরে গুহামানবের পরিবারকে সুরক্ষা দিয়েছিল সেই প্রাগৈতিহাসিক পাথুরে দরজা।
তারপর তো মানুষ সভ্য থেকে সভ্যতর হয়েছে, কিন্তু, সেই দরজার প্রয়োজন কিন্তু ফুরোয় নি। এখন কি কেউ দরজাবিহীন ঘর, বাস, ট্রাম, গাড়ি কল্পনা করতে পারে? দরজা, মানুষকে সুরক্ষার এক অনুভূতি দেয়।
আর ইউরোপে দেখেছি, প্রাচীন কালের দরজা গুলো তো রীতিমত এক শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ইউরোপের প্রাচীন ক্যাথিড্রালের ভারী কারুকাজে ভরা দরজা থেকে শুরু করে, সাধারণ বাড়ীর দরজা গুলোর মধ্যেও যেন এক প্রাচীন আভিজাত্য, প্রাচীন গাম্ভীর্য দেখা যায় – যার ওপারে কি আছে তা জানতে কৌতূহল হয়, রহস্য দানা বাঁধে।
তুলুসে এসে প্রথমে কারুকার্য খচিত উঁচু উঁচু প্রাচীন দরজা গুলো দেখে বড়ই আশ্চর্য লাগত। পরে জানলাম, প্রাচীন কালে তো মানুষ ঘোড়ায় চড়েই বাড়ীর চৌহদ্দির ভেতরে ঢুকত, তাই বাড়ীর সদর দরজা তখন উঁচুই রাখা হোতো।
আমার মনে হয়, দরজা তো বটেই, দরজার কব্জা ও দরজা খোলা-বন্ধ করার মধ্যেই লুকিয়ে আছে মানুষের সভ্যতার সমস্ত রহস্য। শুধু কি প্রাসাদ, ক্যাসল, ক্যাথিড্রালের দরজাই সুন্দর? সাধারণ বাড়ীর দরজার সাধারণত্বের মধ্যেও যে আছে সরল সাধারণ এক সৌন্দর্য।
কখনো মনে হয়, জীবনও যেন প্রচুর বন্ধ দরজার এক সমষ্টি। আর জীবনে তো কতো দরজার পর দরজা পেরিয়ে যেতে হয়, এক একটি বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কড়া নাড়তে হয়, কখনো সেই নতুন দরজা খুলে যায়, আবার কখনো খোলে না – তবুও নতুন নতুন দরজা খোলার চেষ্টা করতে হয়। আবার কখনো, মানুষের জ্ঞানের দরজা খুলে কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাসকে, বদ্ধতা মুক্তি দিতে হয়। দখিন দুয়ার খুলে দিয়ে এক রাশ তাজা হাওয়াকে নিমন্ত্রণ করতে হয়।
বাঃ, খুব সুন্দর এবং মনোগ্রাহী লেখা ও ছবি… 🙂
ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।