তালিনের তম্পিয়া পাহাড়ের উপরে Alexander Nevsky Cathedral কে অনেকটা ঠিক মুকুটের মতোই মনে হয় – পেঁয়াজের মতো দেখতে ক্যাথিড্রালের গম্বুজ চূড়া গুলো অনেক দূর থেকেই দেখা যায়, অনেকটা পথ প্রদর্শনের কাজ করে। উনিশ শতাব্দীতে, উত্তর ইউরোপে, রাশিয়ান আমলে তৈরি প্রায় সমস্ত ক্যাথিড্রালের চূড়া গুলোতে রাশিয়ার স্থাপত্যের গভীর প্রভাব দেখা যায়। অবশ্য শুধু চূড়াই নয়, ক্যাথিড্রালের অন্দর সজ্জার মধ্যেও রাশিয়ার প্রভাব ভালোই।
সকালের ঝকঝকে আলোয় তালিনের সবচেয়ে বড় গোঁড়া ক্যাথিড্রালটি যেন সেজে উঠেছে – ইউরোপে যতই উত্তরের দিকে যাওয়া যায়, ক্যাথিড্রাল গুলোয় নিয়মিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান হতে দেখা যায়, এবং উত্তর ইউরোপের ক্যাথিড্রাল গুলোয় ঢোকার বেশ নিয়ম কানুনও আছে।
যাইহোক, যেহেতু, এই ক্যাথিড্রালটি ইস্টনিয়ার মানুষকে রাশিয়ার স্মৃতি মনে করাতো, পরাধীনতার স্মৃতি, দুঃস্বপ্নের স্মৃতি মনে করাতো, ইস্টনিয়ার মানুষ এই ক্যাথিড্রালকে খুব একটা পছন্দ করত না, তাই, কুড়ির শতকে ইস্টনিয়ার মানুষ এই ক্যাথিড্রালকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল – কিন্তু, অর্থের অভাবে, ও এই ক্যাথিড্রালের বিশাল আকারের জন্যে সেই প্রজেক্ট আর সফল হল না।
আসলে ক্যাথিড্রাল গুলো তো আগত কয়েক শতাব্দীতে স্থায়ীত্বের কথা ভেবেই তৈরি হয়, তাই গঠন খুবই মজবুত হয়, তৈরি করতে যেমন অর্থের প্রয়োজন, ধ্বংসের জন্যেও চাই প্রচুর অর্থ। তারপরে, যেহেতু সোভিয়েত ইউনিয়ন কোন ধর্মকে প্রশ্রয় দিত না, তাই, উত্তর ইউরোপের বহু চার্চ ও ক্যাথিড্রালকে সোভিয়েত ইউনিয়ন বন্ধ করে দিয়েছিল, এমনকি এই ক্যাথিড্রালটিও ছিল পতনের মুখে।
একানব্বইএ ইস্টনিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসন মুক্ত হয়ে, স্বাধীন হওয়ার পর, আশ্চর্যের বিষয় দেখা গেল – যে ক্যাথিড্রালকে ইস্টনিয়ার মানুষ ধ্বংস করতে চেয়েছিল, সেই ক্যাথিড্রালকেই মহা সমারোহে সংরক্ষণ করতে শুরু করল। গত কয়েক শতক ধরে সেই দীর্ঘ সংরক্ষণের কাজ চলছে, এখনো দেখা যায় ক্যাথিড্রালের উপরে পেঁয়াজ-গম্বুজ গুলোর এক অংশে সংরক্ষণের কাজ চলছে – সে যেন এক বিরাট সমারোহ, নিখুঁত ভাবে ক্যাথিড্রালটিকে সংরক্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাছাড়া, স্থানীয় লোকেরা বিশ্বাস করে, এই ক্যাথিড্রালটি স্থানীয় এক লোক নেতার সমাধির উপরে তৈরি হয়েছে।
হয়তো আজও তালিনের মানুষকে এই ক্যাথিড্রাল পরাধীনতার কথা মনে করায়, রাশিয়ার শাসন মনে করায়, কিন্তু, মানুষের বিশ্বাস যাই হোক না কেন, মানুষের তৈরি এক সুন্দর ঐতিহাসিক স্থাপত্যকে শ্রদ্ধা জানানোর মতো উদারতা তালিনের মানুষের হৃদয়ে আছে। কারণ ওরা জানে ঐতিহাসিক নিদর্শনকে ধ্বংস করে ইতিহাস তৈরি হয় না, সযত্নে সংরক্ষণ করেও ইতিহাস তৈরি হয়। তাই, আজও তম্পিয়া পাহাড়ের মুকুট হয়ে এই ক্যাথিড্রাল পুরনো তালিনে রাজত্ব করে, আর তালিনের এক বিখ্যাত টুরিস্ট আকর্ষণ এই ক্যাথিড্রাল। অনেকে শুধু এই ক্যাথিড্রালকে দেখতেই তালিনে আসে।