খুব বেশী সময় নয় – মাত্র গত পঞ্চাশ থেকে আশি বছর, পৃথিবীর নিজের বয়সের কাছে এক পলক সময়ও নয়, তবে আমাদের জীবনের জন্যে বহু, বহু সময় – আর পৃথিবীর সেই এক পলক সময়ের মধ্যে আমরা পৃথিবীকে কি কি দিতে পারলাম – শিল্প বিপ্লব, দূষিত বাতাস, বিষাক্ত হাওয়ায় আছন্ন আকাশ, নোংরা জল, প্লাস্টিকের পাহাড়, বিষাক্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাই প্রোডাক্ট, দূষিত নদী, খরা, সমুদ্রে ভাসমান তেল, অ্যাসিড – যাতে সামুদ্রিক প্রাণীদের প্রান বিপন্ন হতে পারে, অরণ্য বিনাশ করা শহর, ইন্ডাস্ট্রি – যাতে জঙ্গলের হাজার পশুপাখি জীব বিজ্ঞানীদের বিপন্নের খাতায় নাম লেখাতে পারে, উন্নয়ন, উন্নয়ন, উন্নয়নের জটিল রাজনীতি, লড়াই, যুদ্ধ, অ্যাটম বোম, গ্লোবাল ওয়ারমিং – আরও কতো কি। পৃথিবীর বুকে সভ্য মানুষের অবদানের এই দীর্ঘ হিসাব দেখে পৃথিবীর তো উত্তপ্ত হওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। তাই, পৃথিবী উত্তপ্ত হয়ে চলেছে।
সমগ্র পৃথিবী জুড়ে তাপমাত্রা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে, এমনকি শীতের দেশেও নতুন বাড়ী গুলোয় বর্তমানে পাখার ব্যবস্থা দেখা যায়। শুনেছি, ফ্রান্সের পুরনো বাড়ী গুলোয় কোনদিনও পাখা ঝোলানোর ব্যবস্থা ছিল না, কিন্তু, বর্তমানে গরমের সময়ে পাখার ব্যবস্থা করতেই হয়, এমনকি এয়ারকন্ডিশনও ব্যবহার করতে হয়।
নাসার হিসাব মতো, পৃথিবীর তাপমাত্রা নাকি গত একশো বছরে প্রায় এক ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি বেড়ে গেছে। মনে হতেই পারে – প্রতিদিনই তো সকাল থেকে বিকেলে তাপমাত্রার হেরফের হয়ে চলেছে – ঐ এক ডিগ্রিতে কি আসে যায়? কিন্তু, ঐ এক ডিগ্রি তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে পৃথিবীর পরিবেশের কি পরিমাণ রদবদল হতে পারে, তা অনুমান করে পরিবেশবিদদের রাতের ঘুম উড়ে যাওয়ার জোগাড়।
পৃথিবীর তাপমাত্রা ঐ এক ডিগ্রি বাড়ার ফলে পশ্চিম আন্টার্টিকার বরফের চাদর খুবই তাড়াতাড়ি গলে গিয়ে সমুদ্রে মিশে গিয়ে জলস্ফীতি আনতে পারে – এতে সমুদ্র শহর গুলো সম্পূর্ণ জলের নীচে চলে যেতে পারে – আরও কি কি হতে পারে তা নিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা আগেই ভাবতে শুরু করে দিয়েছে।
এক একটা প্রাণীকে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত করতে, নিজের তাপমাত্রার হেরফের ঘটাতে পৃথিবীর নিজেরই কয়েক হাজার বছর কিংবা আরও বেশী সময় লাগে – কিন্তু, মানুষ মাত্র এক প্রজন্মেই অনেক প্রাণীকে বিলুপ্তির পথ দেখিয়ে দিয়েছে, পৃথিবীর তাপমাত্রা বদল ঘটিয়েছে, সমুদ্রের জলে এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে – আর এ সমস্ত ঘটনা যখন মানুষের অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে, বিষণ্ণ করে, মানুষ তার সমস্ত ভুল বুঝে এগিয়ে আসে, ভুল গুলোকে শুধরে নিতে চায়।
তাই, বছরের এই একদিন আমাদের এই শস্য শ্যামলা পৃথিবীর কথা ভাবার জন্যে Earth Day পালন হয়। ১৯৭০ সালে প্রথম এই পৃথিবী দিবসের সূচনা হয়েছিল, তারপর থেকে পৃথিবীর চেহারা অনেক পালটেছে, আর মানুষ পৃথিবীর যতটা ক্ষতি করেছে, তা শুধরে দিতে পৃথিবীর নানা দেশকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। আর গত প্রজন্ম যে ভুল করে গেছে, বর্তমান প্রজন্ম হয়তো সেই ভুল গুলোকে শুধরে নিয়ে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে এক সুস্থ, সুন্দর, সবুজ, নীল, নির্মল পৃথিবী উপহার দিয়ে যেতে পারবে, আর সেই আশাতেই – শুভ পৃথিবী দিবস।
সভ্য মানুষ নয় আরও সঠিকভাবে বললে বলতে হবে, শিক্ষিতি মানুষরাই এই কাজগুলো বেশি বেশি করছে, যারা অসভ্য, অশিক্ষিত তাঁরা ত বনে, জঙ্গলে, পাহাড়ে ও নদীতেই মিশে থাকে। সেখানেই খায়, থাকে ও সেখানের জল, মাটিতেই মিশে যায়।
মন্ত্যব্য করার জন্যে ধন্যবাদ। সত্যিই বলেছেন। ওদের জন্যেই হয়তো আজও প্রকৃতির সবুজের ভারসাম্য বজায় আছে।
শুধু একটা দিন পৃথিবীকে ভালোবেসেই আর কি হবে যদি কাগুজে সভ্যতার নামে অবিচারে বৃক্ষ নিধন বন্ধ না হয়। পৃথিবীটাকে আমরা অনেক ভালবাসি, কিন্তু নিজেরাই সেটাকে বসবাসের অযোগ্য করে ফেলছি!
কমেন্ট করার জন্যে ধন্যবাদ। অন্তত একটি দিন যদি সেই ভুল শুধরে নেওয়া যায় – তারই চেষ্টা আর কি।
জুয়েল ।01884120087