View of Guelph Tower along The River Arno, Pisa, Italy
ইতালির পিসা শহরের কথা বললেই আমাদের মানস পটে যে ছবিটি ভেসে আসতো, তা ছিল ‘লিনিং টাওয়ার অফ পিসা’। কিন্তু, পিসায় গিয়ে, যে দিন পিসা শহরের মাঝ বরাবর বয়ে যাওয়া আরনো নদীর বাঁধানো ধার ঘেঁসে হেঁটে ছিলাম, সে দিন জেনেছিলাম, পিসা শুধু লিনিং টাওয়ারের গল্প বলে না।
ইতালির শতাব্দী প্রাচীন স্বর্ণযুগের ইতিহাসের বহু গৌরব ময় মুহূর্তের সাক্ষী ছিল পিসা, তাই আরনো নদীর তীরে পিসার এই অবহেলিত দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ও টাওয়ার ‘Torre Guelfa’ ও কিন্তু ইতালির বহু প্রাচীন কথা, বহু প্রাচীন ইতিহাসের নিঃশব্দ জানান দিয়ে যায়।
যদিও, লিনিং টাওয়ার ও তার চত্বরের সৌন্দর্যের কাছে এই প্রাচীন দুর্গ ও টাওয়ারের সৌন্দর্য অনেকটাই মলিন হয়ে যায়, যদিও টুরিস্টরা শহরের এদিকে একটু কমই আসে, কিন্তু, যদি কেউ আসে, আরনো নদীর তীর ঘেঁসে হেঁটে যেতে যেতে, পড়ন্ত বেলার অদ্ভুত হলুদ আলোয় নস্টালজিয়া জড়ানো পুরনো দিনের এই ধ্বংসাবশেষ মানুষকে কৌতূহলী করে তুলতে বাধ্য।
এখানে, আরনো নদীর তীরে, বারো শতাব্দীর শুরুর দিকে পিসা শহর জাহাজ তৈরির কাজকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছিল, এবং যথারীতি পিসার স্বর্ণ যুগের সূচনা হয়েছিল। তারপর, তেরো ও চোদ্দ শতাব্দী জুড়ে, দিনে দিনে এই ডক ইয়ার্ডের গুরুত্ব বেড়েই গিয়েছিল। চোদ্দ শতাব্দীর শেষের দিকে পিসার নতুন রাজকুমার আরও সুরক্ষার জন্যে এই ডক ইয়ার্ডকে দুর্গে পরিণত করেছিল, পরে যে দুর্গের নামকরণ হয়েছিল Cittadella Vecchia ।
পনেরো শতাব্দীর শুরুর দিকে পিসা শহরের মানুষ এই উচ্চ Torre Guelfa কিংবা Guelph Tower তৈরি হতে দেখেছিল – আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এই টাওয়ারকে বম্বিং এর দ্বারা ধুলিস্যাত হয়ে যেতেও দেখেছিল। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে শুধু যে এই টাওয়ারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তা নয়, এই দুর্গ এলাকাও মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
তারপর, পঞ্চাশের দশকে আবার এই টাওয়ারকে পুরনো মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় আগের মতো করেই নতুন ভাবে তৈরি করা হয়েছিল, শুধু তাই নয় দর্শকদের জন্যেও এই টাওয়ারের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছিল – যাতে এই টাওয়ারের উপরে গিয়ে পিসা শহর, আরনো নদীর অপূর্ব সৌন্দর্যে, মানুষ মুগ্ধ হয়ে ফিরে যেতে পারে।
আর পুনঃনির্মিত এই টাওয়ার, মানব সভ্যতার সংরক্ষণের প্রতীক হয়ে, আরনো নদীর তীরে আজও শেষ বিকেলের গলন্ত সোনা রঙের রোদ্দুর গায়ে মেখে দাঁড়িয়ে থাকে, মানুষকে কৌতূহলী করে।