দক্ষিণ স্পেনের আন্দালুসিয়া অঞ্চলের, মালাগা শহরে এসে শহরের ক্যাথিড্রালটিকে দূর থেকে দেখলে অসম্পূর্ণ বলে মনে হতে পারে – আসলে মালাগার এই শতাব্দী প্রাচীন ক্যাথিড্রালটি সত্যিই অসম্পূর্ণ।
অথচ, ষোল শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে এই ক্যাথিড্রাল তৈরির কাজ শুরু হয়ে, আঠারো শতাব্দীর প্রায় শেষের দিকেও এই ক্যাথিড্রালের কাজ চলেছিল। কিন্তু, এই দীর্ঘ সময় নিয়ে তৈরি করেও এই ক্যাথিড্রালের আকাশ ছোঁয়া চূড়া দু’টির মধ্যে একটিই মাত্র সম্পূর্ণ হয়েছিল ও আরেকটি চূড়া আজও অসম্পূর্ণ হয়েই রয়ে গেছে।
আর, এই ক্যাথিড্রালের আরেকটি চূড়া তৈরির সংগৃহীত অর্থ কোথায়, কোন কাজে ব্যবহার হয়েছিল, সে নিয়েও স্থানীয় মানুষদের মধ্যে নানান মতবাদের প্রচলন আছে – শোণা যায়, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আমেরিকার বিপ্লবের সময় আমেরিকাকে অর্থ সাহায্যের জন্যেই এই ক্যাথিড্রালের একটি চূড়া অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
আবার কেউ বলে, ঐ চূড়ার অর্থ দিয়ে মালাগার এক বিখ্যাত রাস্তা তৈরি হয়েছিল। তবে অসম্পূর্ণতার মতবাদ যাই হোক না কেন, অসম্পূর্ণ হলেও স্পেনের রেনেসাঁ যুগের এই চার্চ মালাগার অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ। অসম্পূর্ণ চূড়ার জন্যে মালাগার স্থানীয় মানুষরা এই ক্যাথিড্রালকে ‘La Manquita’ বলতে ভালোবাসে – ইংরেজিতে যার মানে The One-Armed Lady।
মালাগার এই ক্যাথিড্রালের গঠন শৈলীতে ঐতিহাসিক ইউরোপের বৈচিত্রময় স্থাপত্য শৈলীর নিদর্শন দেখা যায় – ক্যাথিড্রালের নীচ তলা যদি হয় গথিক স্থাপত্যের নিদর্শন, তবে উঁচু চূড়ার স্থাপত্যে রেনেসাঁর প্রভাব ও সামনের অংশে এবং অন্দরসজ্জায় বারোক স্থাপত্যের সংমিশ্রণ হয়েছে – এক কথায় প্রাচীন ইউরোপিয়ান স্থাপত্যের অভূতপূর্ব নিদর্শন। তাই, ইস্টারের ছুটির উজ্জ্বল সোনালি দুপুরে বহু টুরিস্ট যখন মালাগা শহরকে দেখতে আসে, এই অসম্পূর্ণ ক্যাথিড্রাল ও পাশের বাগানকে একবার দেখে যেতে ভোলে না। হোক না অসম্পূর্ণ – পৃথিবীতে যে সব কিছুই সম্পূর্ণ হতে হবে, নিখুঁত হতে হবে, এমন তো কোন কথা নেই।