দক্ষিণ ফ্রান্সের রোসের বেসিলিকা (Notre Dame du Rosaire de Lourdes, Lourdes, France)

মিদি-পিরেনিস পাহাড় শ্রেণীর ধূসর নীল রেখাকে প্রেক্ষাপটে রেখে দক্ষিণ ফ্রান্সের ছোট্ট শহর লুর্দের প্রধান আকর্ষণই মনে হয় – রোসের বেসিলিকা। সারা বছরই, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী, ভক্ত-অভক্ত, সুস্থ-অসুস্থ, আস্থিক-নাস্থিক, পুরুষ-মহিলা – টুরিস্ট – সবার জন্যেই দক্ষিণ ফ্রান্সের বিখ্যাত এই বিশাল চার্চের দরজা খোলা।

বাইজেন্তাইন স্থাপত্যের নিদর্শন, এই রোমান ক্যাথোলিক চার্চ শুধু যে ঐতিহাসিকতা ও সৌন্দর্যের দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও দর্শনীয় তা নয়, দক্ষিণ ফ্রান্সের এই চার্চ ‘Notre Dame du Rosaire de Lourdes’  বিশ্বাসীদের এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মস্থান।

তাই, গরমের সময়ে এখানে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। গরম পড়লেই – ইউরোপের নানা দিক থেকে অসুস্থ মানুষ ও তাদের সঙ্গীরা এই চার্চের দরজায় আসে। ওরা বিশ্বাস করে, এই চার্চের মা মেরীর মধ্যে এক অলৌকিক শক্তি আছে – যার কাছে এসে, লুর্দের গুহা থেকে উৎপন্ন ঝর্ণার পবিত্র জল পান করলে ও ঐ জলে স্নান করলে অসুস্থ মানুষ অলৌকিক ভাবে সুস্থ হয়ে যায়। তাই, শতাব্দী ধরে ইউরোপের বহু মানুষ শেষ জীবনে অন্তত একবার লুর্দের এই চার্চে আসে, Massabielle পাথরের গুহা থেকে উৎপন্ন ঝর্ণার জল পান করে এবং বোতলে করে আত্মীয় স্বজনের জন্যেও নিয়ে যায়।

অবশ্য, তুলুসের ল্যাবরেটরিতে বহুবার ঐ জলের রাসায়নিক পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রমান করেছে – ঝর্ণার ঐ জল সাধারণ জল, তবে খুবই বিশুদ্ধ। বিজ্ঞান যুক্তির পূজারী, সত্যের পূজারী আর মানুষ বিশ্বাসের পূজারী – তাই, পৃথিবীর সব দেশের মানুষই, সাধারণ জলেই জীবন খুঁজে পায়।

যাইহোক, এই চার্চ স্কোয়ারে এসে দূর থেকেই, ডিসেম্বরের শেষ বিকেলের আলোয় ধূসর রঙের চার্চটির নির্জন শান্ত বিশালতা দেখে আশ্চর্য হতে হয়, অভিভূত হতে হয় – ইউরোপের অন্যান্য চার্চ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা দেখতে। দুই দিক দিয়ে ঢালু সিঁড়ি উঠে গেছে চার্চের গম্বুজের দিকে – সিঁড়ি ধরে সেই গম্বুজের কাছে যাওয়া যায়। চার্চের বিশাল গম্বুজের মাথায় সোনালি মুকুট শেষ বিকেলের আলোয় আরও বেশী চকচকে হয়ে উঠেছে।

বিশাল চত্বরের দু’পাশের সারি বাঁধা গাছ গুলো সম্পূর্ণ নেড়া – ডিসেম্বরের জাঁকালো শীতে সবই কেমন যেন নিঝুম, নিস্তব্ধ। মিদিপিরেনিস পাহাড় শ্রেণীর ওপাশে সূর্য মুখ ঢাকতে ব্যস্ত। এমনি এক সন্ধিক্ষণে, সন্ধ্যা নামার ঠিক আগে দক্ষিণ ফ্রান্সের এমনি এক চার্চ কেমন ভাবে আলোকিত হয়ে সন্ধ্যার প্রস্তুতি নেয় তা দেখতে দেখতে, মিদিপিরেনিস ছুঁয়ে ঠাণ্ডা বাতাসে ভেসে আসা এক মিষ্টি সুবাস অনুভব করতে করতে নিজেদেরকে কেমন যেন অচেনা মনে হয়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel, Western-Europe and tagged , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s