পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক রেল সেতুর তালিকায় রামেশ্বরমের Pamban Bridge অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারে। সমুদ্রের উপরে পাশাপাশি দুই সেতু – এক সেতু দিয়ে গাড়ির চলাচল ও অন্য সেতুটি দিয়ে ট্রেন চলাচল করে – আর সেই ট্রেন চলাচলের রেল সেতুটিই সবচেয়ে বিপজ্জনক – আর এই দুই সেতু ভারতবর্ষের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে Pamban দ্বীপকে জুড়েছে। রামেশ্বরমে এই পথেই যেতে হয়।
সমুদ্রের বিপজ্জনক ঘূর্ণি বায়ু ও সাইক্লোনের কেন্দ্রে অবস্থিত এই সেতুর উপর দিয়ে লোকাল ট্রেনের বিপজ্জনক যাতায়াত দেখার জন্যে অনেকেই গাড়ি চলাচলের সেতুর মাঝে দাঁড়িয়ে যায়। দূর থেকে দীর্ঘ ট্রেন দেখে খেলনা গাড়ি বলেই মনে হয়। কিছুক্ষণ পাশের সেতুতে দাঁড়ালেই বোঝা যায় – দক্ষিণের উদার সমুদ্রের তীব্র হাওয়া কেমন সবকিছু উড়িয়ে নিতে চায়।
ব্রিটিশরা শ্রীলংকার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের উন্নতির জন্যে এই সেতু তৈরি করেছিল। এই সেতুটিকে আবার মাঝামাঝি জায়গায় দুই ভাগে খুলে দিয়ে, নীচ দিয়ে জাহাজ চলাচলও করতে পারে। সেই সময় সমুদ্র পথে জাহাজও অন্যতম যোগাযোগ ছিল – তাই এই ব্যবস্থা।
গাড়ি চলাচলের সেতু দিয়ে রামেশ্বরমের পথে যেতে যেতে, মাঝ পথে দাঁড়িয়ে এই রেল সেতু খুলে যাওয়া দেখাও এক টুরিস্ট আকর্ষণ – তবে এখন তো আর নিয়মিত জাহাজ চলাচল করে না, তাই এই রেল সেতু খোলা ও সেতুর নীচ দিয়ে জাহাজ চলাচল করা দেখাটা যদিও একটু বিরল – তবু হাতে একটু সময় থাকলে দেখা যেতেই পারে।
যাইহোক, ক্রমাগত সমুদ্রের নোনা জলের ধাক্কা ও হাওয়ার হাত থেকে, শতাব্দী প্রাচীন এই সেতুকে মরচে ধরা হতে বাঁচিয়ে রাখা রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে রীতিমত এক চ্যালেঞ্জই বলা যায়। ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই রেলওয়ে দিয়ে আজও সমান দক্ষতায় লোকাল ট্রেনের চলাচল দেখে, ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার প্রশংসা তো একটু করতেই হয়, তবে সেই সেতুকে সঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নত করার প্রশংসা কিন্তু ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদেরই প্রাপ্য – সমুদ্রের মধ্যে প্রতি নিয়ত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে এই সেতুকে বাঁচিয়ে রাখা মুখের কথা নয়। প্রাচীন এই বিপজ্জনক রেল সেতুটি তার নিজস্ব ভয়ংকর সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিকতা দিয়ে সম্প্রতি ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায় নিজের জায়গা করে নিয়েছে।
এইতো কিছুদিন আগে টিভিতে (সম্ভবত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল) বিশ্বের বিপদজনক রেল নিয়ে প্রতিবেদন দেখলাম। তার মধ্যে ভারতের এই রেল সেতুও ছিল। আমি বলব ভয়ঙ্কর কিন্তু রোমাঞ্চকর।
আপনার পোস্টটিও অনেক তথ্যবহুল।
শুভেচ্ছা রইলো।
ধন্যবাদ। হ্যাঁ, দূর থেকে দেখে ভয়ংকর তো বটেই। কিন্তু, প্রতিদিনের যাত্রীরা দেখি, দিব্যি লোকাল ট্রেনের খোলা দরজায় দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে হাত নাড়তে নাড়তে চলে গেল। প্রতিদিনই ওদের এই রোমাঞ্চকর পথের অভিজ্ঞতা হয়।
শুভেচ্ছা রইল, ভালো থাকবেন।