মহালয়ার ভোরে বেতারে সম্প্রচারিত একটা গলা – বাঙালির নস্টালজিয়া। এখন আর বেতার কই, তাই ইন্টারনেটই সই। তাই, বাঙালি যে যেখানেই থাকুক না কেন ইন্টারনেটেই শোণা ঐ ভদ্রলোকের গলা বাঙালীকে স্মৃতি আক্রান্ত করে তোলে। অন্তত আমাদের জেনারেশনের ছেলেবেলার স্মৃতির ঝাঁপি খুলে ধরতে ঐ ভদ্রলোকের কাঁপা কাঁপা গলার জুড়ি মেলা ভার।
ঐ গলা শুনলেই ছেলেবেলার সমস্ত প্রিয় নেই মানুষরা স্মৃতির দরজায় ভিড় করে দাঁড়ায় – শুধু কি আমাদের ছেলেবেলার মহালয়ার স্মৃতি জুড়ে ঐ মানুষটির গলা? শুনি, আমাদের আগের জেনারেশনের মানুষের ছেলেবেলার মহালয়ার স্মৃতিতেও ঐ মানুষটির গলার সমান অধিকার ছিল।
তুলুসের কাকিমাকে – বাজলো তোমার আলোর বেনু… এই আনন্দ যজ্ঞে সবার মধুর আমন্ত্রণ… গাইতে গাইতে চোখ ছলছল হয়ে উঠতে দেখেছি। ঐ একটি গলাই যেন বাঙালির হৃদয় নিংড়ে ছেলেবেলার স্মৃতিকে জাগ্রত করে – মুহূর্তেই মন ছেলেবেলার দিনে ফিরে যেতে পারে।
কোথাও কোথাও লোকেরা আবার মহালয়ার ভোরে রেডিওতে মহালয়া শুনেই থেমে থাকে না – হাঁটতে বেড়িয়ে পড়ে। সে, যে সে হাঁটা নয় – কেউ কেউ তো ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটে ফেলে। দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে এতো দূরে চলে যায়, ফিরে আসতে হলে ট্যাক্সি বা বাস ধরতে হয়। বরাক উপত্যকার মানুষের কাছে মহালয়া মানেই বরাক নদীর দিকে হাঁটা – আর সবাই বরাক নদীর ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে নীচে বরাক নদীকে দেখে। মহালয়ার সকালে বরাকের উপরের সেতুতে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। সেতুতে দাঁড়িয়ে সবাই নীচের নদীতে কি দেখে কে জানে? সেটা বহিরাগত অনেকের কাছেই এক রহস্য।
সে যাইহোক, ছেলেবেলায় মনে হোতো, এই দিন থেকেই যেন প্রকৃতি, মানুষের মন – সব কিছুই একটু অন্যরকম হয়ে যেত, অনেক হালকা, এক খুশির সুর, দিন গোণা, ঘরে ফেরা, ঢাকির ঢাকের দ্রিদিম আওয়াজ, নদীর ধারে কাশফুল ফুটে ওঠা, ঘন নীল আকাশ, বাতাসে এক হালকা শিরশিরে ঠাণ্ডা অনুভূতি – সব মিলিয়ে এক অন্য আমেজ, অন্য সময় – যে সময় জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ভালো রাখার, ভালো থাকার কথা বলে।
সুন্দর করে লিখেছেন। সেই ছেলে বেলায় বাবা খুব ভোরে ডাক দিত মহালয়া শুনতে। সেই সব দিন ভাবলে স্মৃতি কাতর হয়ে পড়ি ।
শুভ মহালয়া। শুভেচ্ছা নিরন্তর।
ধন্যবাদ। হ্যাঁ ঠিক বলেছেন।
আপনাকেও জানাই শুভ মহালয়া। ভালো থাকবেন।