বাজার যদি হয় জনজীবনের এক আয়না – তবে, প্রাচীন গ্রাম্য মিউনিখের সহজ সরল ছন্দময় জনজীবনের এক টুকরো নস্টালজিক ছবি দেখতে অনেকেই মিউনিখ কেন্দ্রের এই বাজার ‘Viktualienmarkt’ এ আসে – এখানে মিউনিখের বিখ্যাত বিয়ারের দোকানের সামনে, সামারের উজ্জ্বল দুপুরে চেস্ট নাট গাছের ঘন ছায়ায় বসে খাওয়া দাওয়া, হাসি আনন্দ, কেনাকাটা ইত্যাদি নিয়ে স্থানীয়রা মেতে থাকে – এই বাজারের চরিত্রে বেশ এক ফুরফুরে খোশ মেজাজি ভাব আছে। এখানে মানুষের উপস্থিতি দেখে মনে হয় – এই বাজারে লোকে কেনাকাটার চেয়েও বেশী, সময় কাটাতে, খাওয়া দাওয়া করতে কিংবা শুধু মানুষ দেখতেই আসে।
মিউনিখের বিখ্যাত ‘dirndl’ পোশাকে সজ্জিত সুন্দরীরা এখানে মিউনিখের ঐতিহ্যবাহী বিয়ার পরিবেশন করে। এখানের বিয়ার শপ গুলোতে সপ্তাহের প্রতিটি আলাদা দিনে আলাদা রকমের বিয়ার পরিবেশন করা হয়।
প্রাচীনকালে মিউনিখের শহরকেন্দ্র Marienplatz এ এই বাজার বসতো, কিন্তু, দিনে দিনে বাজারের আয়তন বেড়ে যাওয়ায় Maximilian I উনিশ শতাব্দীর শুরুর দিকেই এই বাজারকে Marienplatz থেকে একটু সরিয়ে দেওয়ার আদেশ দিয়েছিল। তারপর তো দিনে দিনে এই বাজারের আয়তন অনেক বেড়ে গেছে। একদিকে ঢাকা বাজারে দৈনন্দিন জীবন যাপনের যাবতীয় জিনিস, আরেক দিকে খোলা বাজার – এই দুইয়ের সমন্বয়ে এই জায়গা মিউনিখের আরেক ব্যবসায়িক ও পর্যটন কেন্দ্র।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয় ক্ষতির পরে মিউনিখ শহর কতৃপক্ষ এই বাজারকে পুরনো মহিমায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে ঢেলে সাজিয়েছিল। বাজারের মধ্যেই দেখা যায় জার্মানির বিখ্যাত অভিনেত্রী Liesl-Karlstadt এর ব্রোঞ্জের মূর্তি ও তাকে ঘিরে জলের ফোয়ারা – পথ চলতি মানুষ এখান থেকে খাওয়ার জলের বোতল ভরে নিতে দ্বিধা করে না। মিউনিখের অভিনেত্রী Liesl-Karlstadt নাকি মিউনিখের এক প্রজন্মের জনপ্রিয় সংস্কৃতি জুড়ে উপস্থিত ছিল।
বাজারের একপাশে আকাশছোঁয়া রঙিন Maypole , বাজারে আগত টুরিস্টদের চোখ এড়িয়ে যেতে পারে না। মে-পোলের গায়ে মিউনিখের বিখ্যাত শিল্প ও ব্যবসায় জড়িত মানুষের নানা ধরণের ছবি আঁকা। বহু প্রাচীন কাল থেকেই বেভেরিয়ার সংস্কৃতিতে এই মে-পোলের উপস্থিতি দেখা যায় – তাই হয়তো বাজারের মধ্যে এই মে-পোলের উপস্থিতি।
কি নেই এই বাজারে – ডিমের খোলা দিয়ে তৈরি ঘর সাজানোর জিনিস থেকে শুরু করে, হাতে তৈরি পুতুল, খাবার দাবার, আচার, অলিভ, ফুল, ফল, ওয়াইন, নানান exotic জিনিস, যা কিনা মিউনিখের অন্য কোথাও পাওয়া যায় না – সবই এই বাজারে দেখা যায়। তাজা ফল ও সবজির দোকানে শুকনো লঙ্কার ঝুলন্ত তোড়া দেখে বেশ আশ্চর্যই হলাম – এরা তো ঝাল এক্কেবারেই খায় না, তবে এতো লঙ্কার বাহার কেন? শুনলাম, ঐ লঙ্কা শুধু রঙের জন্যে, এক্কেবারেই ঝাল নেই।
ইউরোপের অন্যান্য জায়গায় যখন শুধুই চীনে তৈরি জিনিসের ছড়াছড়ি – মিউনিখের এই বাজারটি কিন্তু অনেক সন্তর্পণে চীনের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করে – তবে মিউনিখের এই প্রাচীন বাজারটি ঠিক কতদিন বিশ্ব গ্রাসী বিশ্বায়নের হাত থেকে রক্ষা পাবে কে জানে?
Besh bhalo laglo Munich er ei bajar tar bepare jene… rongin khabar arr jinish er majhkhane theke hete berano ta nishchoi ekta obhutopurbo experience chilo… Abakprithibi r blog er madhyame ekta alada rokom first hand experience janlam jetar bepare shohoje information pawa jayna!
ধন্যবাদ। ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।