অমর, অক্ষয়, অবিনশ্বর প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকের তৈরি জিনিস পৃথিবীর মানুষের জীবনকে এমন ভাবে আছন্ন করে ফেলছে, ঢেকে ফেলছে – মানুষ হয়তো বাঁশ বেতের তৈরি দৈনন্দিন ব্যবহারের নানান জিনিস, যা কিনা একদা এক কালে এক শিল্পের পর্যায়ে ছিল, সে কথা ভুলেই গেছে। অন্তত, আমি তো প্লাস্টিকের দৌলতে বাঁশ, বেতের তৈরি জিনিসের কথা ভুলেই ছিলাম।
তবে, ইউরোপে দেখি এখনো অনেক মানুষ আছে, যারা এখনো স্রোতের উল্টো দিকে সাঁতার কাটতেই পছন্দ করে, টেঁকসই প্লাস্টিকের গুমোর ওরা থোরাই পরোয়া করে। তাই, এখনো কেউ কেউ বাঁশ ও বেত দিয়ে জিনিস তৈরি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে আসে।
ফরাসী সুন্দরী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ, বৃদ্ধা অনেককেই দেখেছি এখনো বেতের তৈরি বড় ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতে – অবশ্য তাদের সংখ্যা কমের দিকেই বলা যায়, পৃথিবীর সব জায়গাতেই মানুষ অবিনশ্বর জিনিস ব্যবহার করতে ভালোবাসে – কিন্তু, ইউরোপের কিছু হাতে গোনা বেত শিল্পী আছে, যারা কিছুতেই সেই প্রাচীন প্রয়োজনীয় শিল্পকে ছাড়তে নারাজ। তাই, আজও তারা বেতের জিনিস তৈরি করে। ইউরোপের কোথাও মেলা বা সাপ্তাহিক বাজারে বেতের তৈরি জিনিস নিয়ে বসে।
ভিয়েনার সানডে মার্কেটের এক কোণে এক নিঃসঙ্গ বয়স্ক ভদ্রলোককে বেতের তৈরি প্রচুর জিনিস নিয়ে বসে থাকতে দেখেছিলাম – খদ্দের অবশ্য একটাও দেখি নি। বেতের তৈরি ব্যাগ, ঝুড়ি, লন্ড্রি রাখার ঝুড়ি, মাছ ধরার ঝুড়ি – সবই পুরনো দিনকে মনে করায়। তারপর, রিগার শিল্প মেলাতেও রিগার এক স্থানীয় লোক বেতের তৈরি নানান ধরণের জিনিস সাজিয়ে বসেছিল ।
সময়কে তো আমরা কেউই ধরে রাখতে পারবো না, সময় বদলাবেই, কিন্তু সেই সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো সময়ের বহু ভালো খারাপ জিনিসও যে বদল হয়ে চলেছে – খারাপ বদলে ভালো হয়ে যাক, কিন্তু, ভালো ও সুন্দর বদলে যখন খারাপের দিকে যায়, মনখারাপ হয়ে যায়। প্লাস্টিকের দৈনন্দিন ব্যবহারও যেন সেই দিকেই নির্দেশ করে – আমাদের পূর্বপুরুষরা আমাদের দিয়েছিল – সবুজ দ্বীপ, পাহাড়, নির্মল বায়ু – আর আমরা? আমরা পরবর্তী প্রজন্মকে উত্তরাধিকার সূত্রে দিয়ে যাবো – প্লাস্টিকের তৈরি কয়েকটা দ্বীপ, পাহাড়, প্লাস্টিকের তৈরি জঞ্জাল, আবহাওয়া বদল, পরিবেশ দূষণ আরও কতো কি। বেতের তৈরি জিনিস হয়তো তখন ইতিহাস হবে।