গরমের উজ্জ্বল দিনে, চেস্ট নাট গাছের ঘন ছায়ায় বসে, স্থানীয় মিউজিসিয়ানের বাজানো ব্রাস মিউজিক শুনতে শুনতে, বিয়ারের বিশাল এক মগে চুমুক দেওয়া মিউনিখবাসীর কাছে এক অন্যতম ছন্দময় বিনোদন। উজ্জ্বল দিনে, খোলা আকাশের নীচে বিয়ার গার্ডেনের এমন উদার বিনোদনের ছবি বোধহয় পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। সেই বিনোদনের ছবি দেখা যায় বিশাল ইংলিশ গার্ডেনের এক দিকের বিয়ার গার্ডেন ‘Chinesische Turm’ এ।
মিউনিখের ইংলিশ গার্ডেনে এসে, এর মাঝে বিশাল এই বিয়ার গার্ডেনকে এড়িয়ে চলা বেশ মুশকিল, চোখে পড়বেই। যদিও মিউনিখের বিয়ারের সঙ্গে চীনের কোন সম্পর্ক নেই, কিন্তু চাইনিজ মন্দির বা প্যাগোডার আকারে কাঠের তৈরি পাঁচতলা উঁচু এক অবয়বই এই বিয়ার গার্ডেনকে চাইনিজ বিয়ার গার্ডেন বলে পরিচয় করিয়েছে। বেশ কয়েকবার কাঠের এই প্যাগোডা আগুনে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু প্রতিবারই পুরনো আকারে তৈরি করা হয়েছে।
মিউনিখের স্থানীয় মানুষ, ছাত্র ছাত্রী সবার কাছে এই চাইনিজ বিয়ার গার্ডেন যেমন প্রিয়, তেমনি টুরিস্টদের কাছেও খুবই প্রিয় – এক টুরিস্ট আকর্ষণ, বলা যায় মিউনিখের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিয়ার গার্ডেন এই Chinesische Turm। আসলে বিয়ার গার্ডেনে এলে মিউনিখের মানুষের আসল বিনোদন প্রিয় চরিত্র দেখা যায়।
প্রতি বছর জুলাই মাসে এই বিয়ার গার্ডেন সময়ের হাত ধরে ইতিহাসের পাতায় ফিরে যায়, স্থানীয় ট্র্যাডিশনাল পোশাকে নাচের উৎসব হয় – Kocherlball, এই নাচের উৎসবে মিউনিখের পুরনো ইতিহাস জাগ্রত হয়। রঙিন ট্র্যাডিশনাল পোশাকে নাচ দেখতে বহু মানুষ ভিড় করে। রাজ পরিবারে যারা কাজ করতো, তাদের সম্মানে এই উৎসব পালন হয়।
সারাদিনের কাজের শেষে বিয়ারের মগে চুমুক, একটু আলাপচারিতা, হাসি, গরমের দিনে বিয়ার গার্ডেনের গাছের ছায়ায় বসে খাওয়া দাওয়া, ট্র্যাডিশনাল পোশাকে নাচ, মিউজিক, আনন্দিত মানুষের সঙ্গ, আনন্দ উৎসব, উজ্জ্বল ছুটির দিন – সব মিলিয়েই মিউনিখের সামার, মিউনিখের জীবন যাপন। আর সেই উজ্জ্বল আনন্দিত জীবনযাপনে কোথাও কিন্তু মিউনিখের ইতিহাসের কুখ্যাত মানুষটির কোন চিহ্ন নেই। সব দেশেই মনে হয়, সাধারণ মানুষ কুখ্যাত মানুষকে মনে রাখে না, অতি সহজেই ভুলে গিয়ে খুব তাড়াতাড়ি শান্তির খোঁজ করে, এক স্থায়িত্বের খোঁজ করে, আর এতেই সাধারণ মানুষের জয়।