ফরাসীরা, শুধু ফরাসীরা কেন, ইউরোপের মানুষ বোধহয় আরবের প্রবাদ – ‘If I had but two loaves of bread, I would sell one and buy hyacinths, for they would feed my soul’ বাক্যটিকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে, তাই ইউরোপের সব জায়গাতেই রুটির দোকানের পাশেই দেখি সাজানো ফুলের দোকান।
এমনকি, তুলুসে আমাদের বাড়ীর নীচে ঠিক উলটো দিকে দুই ফরাসী তরুণীর ফুলের দোকান ও ফরাসী পাউরুটি বাগেতের দোকান একদম পাশাপাশি। সপ্তাহের সারা দিন তো বটেই, রবিবারের ছুটির দিনেও খুবই ব্যস্ত হয়ে, দোকানের সামনে ফুল সাজায় দুই তরুণী – ওদের দোকানে ফুলের সমাহার দেখেই বোঝা যায় ফ্রান্সে বর্তমানে কোন ঋতু চলছে। সকাল হলেই দেখা যায়, একটা ছোট ট্রাক বোঝাই ফুল চলে এসেছে ওদের দোকানে – রোদ, বৃষ্টি, তুষারপাত কোন কিছুই বাদ যায় না – বাড়ীর সামনে ঠিকই রং দেখতে পাই, ভালো লাগে।
এ তো গেল স্থায়ী দোকানের কথা – রবিবারে স্থানীয় মার্কেটের অস্থায়ী ফুলের দোকানেও সাজানো ফুলের মেলা দেখে তাক লেগে যায়। কোথা হতে আসে এমন অপূর্ব, তাজা, রঙিন ফুল ? প্রশ্ন জাগতেই পারে। কিন্তু, তার উত্তর যে লুকিয়ে আছে, হাজার মাইল দূরে কেনিয়ার প্রান্তরে তা কে জানতো।
যে ফুল গুলো দেখে ইউরোপের মানুষ মোহিত হয়, তার বেশীর ভাগ কিন্তু কেনিয়াতে উৎপাদিত হয়। যেমন, ভ্যালেন্টাইন’স ডের রক্ত লাল গোলাপ কেনিয়া থেকে উড়ে এসে ইউরোপের লক্ষ প্রেয়সীর মানভঞ্জন করে। শুধু ইউরোপে ফুল রপ্তানি করেই কেনিয়ার অর্থনীতির এক স্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে – ভাবা যায়? অনেক মিডিয়া তো কেনিয়াকে ইউরোপের ফুল বাগান বলেও অভিহিত করেছে। তবে, কেনিয়া শুধু যে ইউরোপে ফুল রপ্তানি করে তা নয়, রাশিয়া ও আমেরিকাতেও চলে যায় কেনিয়ায় তৈরি ফুল।
কেনিয়ার আবহাওয়া নাকি ফুল চাষিদের স্বর্গ রাজ্য – সারা বছরের সূর্যের আলো, মনোরম তাপমাত্রা, দিনে গরম রাতে ঠাণ্ডা – সবই রঙিন ফুল উৎপাদনের জন্যে অনুকূল, বিশেষ করে গোলাপ ফুলের জন্যে উত্তম আবহাওয়া। তা ছাড়া, ইউরোপের কাছাকাছি কেনিয়ার ভৌগলিক অবস্থানের জন্যে ইউরোপের সঙ্গে যোগাযোগও খুব সুবিধাজনক। নাইরোবি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের এক অংশ সম্পূর্ণ ভাবে ফুল ও সবজি রপ্তানির জন্যেই নিবেদিত – যাতে রঙিন ফুল গুলো খুব তাড়াতাড়ি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যায়। কেনিয়ার পাঁচ লক্ষেরও বেশী মানুষ ফুল চাষের সঙ্গে জড়িয়ে আছে, আর সেই সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে কেনিয়ার ফুলের বাজার, ও চাহিদা – কারণ কেনিয়ার ফুল নাকি দীর্ঘ দিন তাজা রাখা যায়।
অবশ্য, সমস্ত পৃথিবীর টিউলিপ ফুলের চাহিদা এখনো হল্যান্ড মিটিয়ে দেয়। একটু পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে আরও স্পষ্ট হয় – যেমন, হল্যান্ডে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফুল নিলামের কোম্পানিতে ২০১০ এ চার বিলিয়ন ইউরোর ফুল বিক্রি হয়েছিল। তাহলেই বোঝা যায়, ইউরোপের মানুষের জীবনে ফুল কেমন অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে আছে! হৃদয়কে সন্তুষ্ট করতে যে ফুলের হাসিই চাই।
Awesome post..double thumps up….
Thank you.
সত্যিই দারুন!
ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল।