পিসার বিখ্যাত তিন মনুমেন্ট, পিসার পুরনো দিনের সমুদ্র পথে ব্যবসার সাফল্য ও অর্থের এক বিশাল বহিঃপ্রকাশ – নিজস্ব স্থাপত্য স্থাইলে বিখ্যাত পিসার Baptistry, কিন্তু, কেন কে জানে পিসার ক্যাথিড্রাল ও হেলানো টাওয়ারের থেকে খ্যাতির দিক থেকে একটু পিছিয়েই আছে, মধ্যযুগের কারুকার্যময় এই স্থাপত্য পর্যটকদের কাছে যেন আড়ালেই থেকে যায়।
পিসার এই মনুমেন্ট স্কোয়ারে এসে, প্রথমে অনেকেই লিনিং টাওয়ারকেই খোঁজে, অথচ, এই স্থাপত্য লিনিং টাওয়ার তৈরির অনেক আগেই তৈরি হয়েছিল, বারো শতাব্দীতে তৈরি হতে শুরু করে প্রায় চোদ্দ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে শেষ হয়েছিল – মাঝে পিসায় ঘটে গিয়েছিল নানান ঘটনা। এমনকি, লিনিং টাওয়ারের চেয়ে উচ্চতায় একটু উঁচুও বটে। তাই, যখন এই Baptistry চোখে পড়ে, বিস্মিত হতেই হয়। অবশ্য, ইতালির সবচেয়ে বড়, সুন্দর কারুকার্য ময় এই Baptistry চোখে পড়তে বাধ্য।
সাধারণত ক্যাথিড্রালের Baptistry নাকি এতো বড় হয় না, কিন্তু, পিসার Baptistry প্রধান ক্যাথিড্রালের বাইরে পিসা শহরের ঐশ্বর্য, উচ্চাশা প্রকাশের জন্যেই যেন তৈরি হয়েছিল, তাছাড়া, মধ্য যুগে নাকি ব্যাপ্তাইজ না হলে রোমান ক্যাথোলিক ক্যাথিড্রালের ভেতরে কেউই ঢুকতে পারতো না, তাই, ক্যাথিড্রালে ঢোকার আগে সেই ব্যাপটাইজ করার জন্যেই সম্পূর্ণ আলাদা করে ক্যাথিড্রালের সামনেই এই স্থাপত্য তৈরি করা হয়েছিল।
নীচে দাঁড়িয়ে উপরের দিকে তাকালে, দেখা যায় ত্রিভুজ আকৃতির খোলা গ্যালারীর মাঝে মাঝে সরু থাম দিয়ে তৈরি স্থাপত্য, আর ত্রিভুজের সরু কোন গুলো আকাশ ছোঁয়ার আশায় – এই ধরণের স্থাপত্য ইতালির প্রাচীন স্থাপত্যের এক বিশেষ বৈশিষ্ট, যা কিনা ক্যাথিড্রালের গায়েও দেখা যায় – সেই সময় ইতালিতে এই ধরণের স্থাপত্য খুবই জনপ্রিয় ছিল।
ইতিহাস যদিও বলে বিশাল এই স্থাপত্য পিসা শহর কতৃপক্ষের তৈরি, কিন্তু, স্থানীয় লোকেরা বলে, এই স্থাপত্য তৈরি হয়েছিল পিসার স্থানীয় মানুষের অর্থে – বারো শতাব্দীর শেষের দিকে, প্রতি মাসের প্রথম দিনে, পিসার প্রতিটি পরিবারকে এই বিশাল প্রোজেক্টের জন্যে অর্থ দিতে হত, দিতেই হোতো, সে যেমন করেই হোক। তাই, হয়তো পিসার মানুষ আজও এই মনুমেন্টকে যত্ন করে। এই স্থাপত্যের গায়ে কোথাও পুরনোর কোন চিহ্ন নেই।
বাইরের দিকে বিশাল দরজা ঘিরে, দেওয়াল জুড়ে ব্যাপটিস্ট সেন্ট জনের জীবনের গল্প নিয়ে কারুকার্যময় সব স্ট্যাচু সাজানো। বাইরের দিক যতটা সাজানো, ভেতরে কিন্তু কোন কারুকাজই নেই, আশ্চর্যজনক ভাবে অন্দরসাজ খুবই সাদামাঠা। যাইহোক, পৃথিবীর বুকে মানুষের তৈরি অপূর্ব স্থাপত্য যেমন আজকের মানুষকে অবাক করে, তেমনি হয়তো এক অদ্ভুত প্রেরনাও দেয়, তাই হয়তো পৃথিবীর নানা দিক থেকে মানুষ একেই দেখতে আসে।