পিসা – বলতে ছেলেবেলায় প্রথমেই যা চোখে ভাসতো, পিসার হেলানো টাওয়ার ছাড়া অন্য কিছু মনে পড়ে না। কিন্তু, পিসায় পদার্পণ করে জানলাম, পিসা শুধু লিনিং টাওয়ার নয় – পিসা পর্যটকদের আরও অন্য অনেক কিছু উপহার দেয়, উপহার দেয় চমক, স্থাপত্যের এক সারপ্রাইজ উপহার দেয়।
বিশেষ করে, যেখানে পিসার লিনিং টাওয়ারের উপস্থিতি – Piazza dei Miracoli বা Square of Miracles সেখানেই পিসার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ও সুন্দর স্থাপত্যের সমাবেশ – স্কোয়ারের সামনে প্রথমেই যাকে চোখে পড়ে Pisa Cathedral ও Pisa Baptistry – রীতিমত মধ্যযুগীয় স্থাপত্যের এক চমকই বলা যায়। আর স্কোয়ারের কেন্দ্রে মধ্যমণি হয়ে উপস্থিত পিসা ক্যাথিড্রাল।
জানি না, বছরের অন্য সময়ে এই স্কোয়ার কেমন থাকে, কিন্তু, এপ্রিলের ইস্টারের ছুটির উজ্জ্বল দুপুরে ঘন নীল আকাশের প্রেক্ষাপটে বিশাল ঐ ক্যাথিড্রাল আমাদের মনে রাজকীয় উপস্থিতির এক রেশ ছেড়ে যায়। ক্যাথিড্রালের সামনে দাঁড়িয়ে ঘাড় উঁচু করে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখা যায় – নীল আকাশ ছুঁয়ে ফেলার অভিপ্রায়ে শিশু কোলে ম্যাডোনার মূর্তি, অবশ্য নীচ থেকে ম্যাডোনার মুখ স্পষ্ট বোঝা যায় না, শুধু অবয়ব বোঝা যায়।
বিশাল এই স্থাপত্যের সামনে দাঁড়িয়ে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে কয়েক ঘণ্টা সময় যেন মুহূর্তের রূপে কেটে যায়। ক্যাথিড্রালের বিশাল সদর দরজার কারুকাজ গুলো তাকিয়ে দেখার মতোই বটে – বিশাল ব্রোঞ্জের দরজায় বাইবেলের গল্পের চরিত্ররা রূপ পেয়েছে।
ক্যাথিড্রালের সামনের আধ খোলা দরজা দিয়ে টুরিস্টের আসা যাওয়া, সামনের সবুজ ঘাসের চত্বরে রোদ পিঠে নিয়ে বসা ছাত্র ছাত্রী ও পর্যটকদের ছুটি কাটানোর মেজাজ, পর্যটকদের সুভেনির বেছে নেওয়ার মনোযোগ – সব মিলিয়ে ইস্টারের সময় ক্যাথিড্রাল চত্বরে বেশ এক ছুটির পরিবেশ তৈরি হয়। আর সেই ছুটির পরিবেশে গা ভাসিয়ে দিতে নেই কো কারো মানা – শুধু একটু পকেট ও ব্যাগ সামলে রাখতে হয়, পিসার এই ক্যাথিড্রাল চত্বরে ছিঁচকে চোরের উপদ্রপ বেশ ভালোই।