কোথাও দিগন্ত বিস্তৃত হলুদ ঘাস ফুল ঢাকা ঢালু, উঁচু নিচু পাহাড়ি জমি, কোথাও শুধুই হলুদে ঢাকা সমতল, কোথাও দূরে আল্পসের পাহাড়শ্রেণীর তুষার ঢাকা সাদা পাহাড় চূড়ার প্রেক্ষাপট, কোথাও ছবির মতো সুন্দর ছোট্ট গ্রামে মানুষের সাজানো বসতি – এই সব কিছুর মাঝ দিয়ে উজ্জ্বল হলুদ দুপুরে, যখন ট্রেন ছুটে চলে, জানালা থেকে চোখ ফিরিয়ে থাকা যায় কি?
না, আমরা তো বেভেরিয়ার অপূর্ব সৌন্দর্য থেকে কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারিনি। শুধু কি আমরা? দুপুরের প্রায় ফাঁকা ট্রেনে আমরা কয়েক জন যাত্রীর, সবাইকেই সেই অপূর্ব সুন্দর প্রকৃতির সৌন্দর্যে বিভোর হতে, মুগ্ধ হতে দেখেছি।
বছরের অন্যান্য সময়ে, যে প্রকৃতি শীতের ধূসর চাদর জড়িয়ে জবুথবু হয়ে থাকে, সেই প্রকৃতিই যে এপ্রিলের মাঝামঝি সময়ে এমন অপূর্ব রূপে সেজে উঠতে পারে, তা দেখার জন্যে সামার শুরু হলে অনেকেই জার্মানির বেভেরিয়া অঞ্চলে আসে। আর বেভেরিয়ার প্রকৃতিও তাদের কোন ভাবেই নিরাশ করে না, রূপের ডালি সাজিয়ে স্বাগত জানায়।
আল্পসকে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিয়ে, সামারে জার্মানির বেভেরিয়ান আল্পস কোন অংশেই সুইস প্রকৃতির চেয়ে কম যায় না। এখানের প্রকৃতির চরিত্রেও আল্পসের পাদদেশের সেই রোম্যান্টিক সৌরভ পাওয়া যায়, সেই তাজা হাওয়ার ছোঁয়া পাওয়া যায়, সেই অপূর্ব রঙের খেলা দেখা যায়।
এমনি অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে, চলন্ত ট্রেনের জানালার পাশে বসে যে কোন ভাবনাকে ছুটি দিয়ে, শুধুই দেখতেই যে ভালো লাগে। ভালো লাগে দৃশ্যের সঙ্গে সঙ্গে চলতে, যে লোকটি লাল জামা গায়ে দিয়ে সাইকেল চালিয়ে হলুদ ঢালু মাঠের ওপারে মিলিয়ে যেতে যেতে এক সুন্দর ছবি তৈরি করে দিয়ে যায় – ভালো লাগে সেই রঙিন দৃশ্যকে অনুসরণ করতে।
চলন্ত ট্রেন যখন বেভেরিয়ার এই সুন্দর প্রকৃতির রাজ্যে এসে পড়েছিল, সেই দিন – এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হোতো বল তো… গানটির তাৎপর্য স্পষ্ট হয়েছিল। পথের সৌন্দর্য যদি এমনি অপূর্ব হয় তবে পথ শেষ না হওয়াই তো ভালো। কিন্তু, পথ একদিন, এক সময়ে ঠিকই শেষ হয়, মানুষ তার গন্ত্যব্যে পৌঁছয়, পৌঁছতেই হয় – এই তো নিয়ম, সেই নিয়মকে প্রকৃতির কোন সৌন্দর্য, কোন ছবিই পালটে দিতে পারে না, শুধু এই পথ চলায় মুগ্ধ হওয়া যায়, পথের সৌন্দর্যকে স্মৃতির মুঠোয় ধরে রাখা যায়।