বিশাল এক রাজ প্রাসাদ, সুন্দর উজ্জ্বল রঙের ফুল দিয়ে ঘেরা বাগান, ঝকঝকে সোনালি দিন, নীল আকাশে পেঁজা তুলোয় মুক্তির আস্বাদ, মনোরম পরিবেশ, হাওয়ায় এক মাতাল মিষ্টি সুগন্ধ, ভেসে আসা উদাস করানো মন ভোলানো এক মধুর সুর, রাজপ্রাসাদের বাগান থেকে দাঁড়িয়ে দূরে দেখা যায় এক পাহাড়, পাহাড়ের উপরে এক প্রাচীন ক্যাসল – সব মিলিয়ে এখানে যেন স্বপ্নেরা বাসা বাঁধে।
পৃথিবীতে যে এমনি এক স্বপ্ন ময়, মোহময় সুন্দর জায়গা আছে, তা সেলসবার্গের মিরাবেল প্যালেস ও তার সামনের বাগানে না এলে জানতামই না। মিরাবেল প্যালেসের বিশাল বাগানের সাজানো গাছের সারির মধ্য দিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে যাওয়া যেন কোন কালের সেই আবছা স্বপ্নকেই অনুসরণ করা। তাই তো, ‘সাউন্ড অফ মিউজিক’ সিনেমাটির বহু দৃশ্য এখানেই নেওয়া হয়েছিল।
উনিশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে মিরাবেল প্রাসাদের বাগান, জন সাধারণের জন্যে খুলে দেওয়া হয়েছিল – তখন থেকেই এই বাগান স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে, চিত্রকর, শিল্পী, ফটোগ্রাফারকে এর আশ্চর্য সৌন্দর্য দিয়ে আকর্ষণ করে চলেছে।
এপ্রিল মাসটি যেন এখানে নিয়ে আসে বসন্তের উজ্জ্বলতা, টিউলিপের ফুটে ওঠা, তাই এপ্রিল থেকেই এখানে শুরু হয়ে যায় পৃথিবীর ভ্রমণ পিয়াসীদের আসা যাওয়া। সামারে, ইউনেস্কোর হেরিটেজ সাইটের অন্তর্গত এই প্রাসাদ ও বাগান প্রতিদিন অন্তত কয়েক হাজার মানুষের আনাগোনায় মেতে থাকে, আর প্র্যত্যকেই এর আশ্চর্য সৌন্দর্যে বিভোর হয়, আশ্চর্য হয়, অভিভূত হয়।
সতেরো ও আঠারো শতাব্দী জুড়ে মিলিয়ে মিশিয়ে তৈরি এই স্থাপত্য ইউরোপের অন্যতম সুন্দর স্থাপত্যের অন্তর্গত, আর প্রাসাদের বাগানকে তো ইউরোপের অন্যতম সুন্দর বারোক স্টাইলে তৈরি বাগানের পর্যায়ে, প্রথম থেকেই রাখা হয়েছিল। জ্যামিতিক নক্সায় সাজানো বিশাল ফুল বাগানকে, মাইথোলজি থেকে উঠে আসা পাথুরে স্ট্যাচুর দল শতাব্দী ধরে পাহারা দিয়ে চলেছে।
কেউ যদি এখানে এসে মনে করে, এই প্রাসাদ ও বিশাল বাগানকে সে কখনো স্বপ্নে দেখেছে, তাহলে, মনে হয় সেই ভাবনায় কোথাও ভুল নেই। এখানে বাগানের সবুজ ঘাসের মধ্যে টিউলিপ ও অন্যান্য ফুল দিয়ে সাজানো কারুকাজ গুলোও যেন সেই স্বপ্নকেই প্রশ্রয় দেয়, আর যদি দিনের মুখ উজ্জ্বল হয় তাহলে তো কথাই নেই, স্বপ্নরা তো বাঁধন ছাড়া হবেই।