ফরাসী জীবন যাপন প্যাস্ট্রি ও বাগেত ছাড়া যেন এক্কেবারেই অচল। ফরাসী শক্ত পাউরুটি ‘বাগেত’এর সঙ্গে প্রথম পরিচয় ফ্রান্সে এসে, প্যাস্ট্রির সঙ্গে আগেও একটু আধটু পরিচয় ছিল, কিন্তু, ফ্রান্সে এসে প্যাস্ট্রির নানান স্বাদ, নানান রঙিন বাহারের সঙ্গে পরিচিত হলাম – ফরাসী বাজারে যে কতো ধরণের প্যাস্ট্রি পাওয়া যায় তার হিসাব নেই, ফ্রান্সে প্রতিদিনই বোধহয় নতুন ধরণের প্যাস্ট্রির জন্ম হয়। নানা ধরণের প্যাস্ট্রির আবার নানান নাম, নানান স্বাদ, নানান গন্ধ।
তাই, ফ্রান্সে এসে প্যাস্ট্রিকে দেখে মুখ ফিরিয়ে ফিরে গেছে, এমন মানুষ পাওয়া বিরল – বছরের নানা সময়ের উৎসব অনুষ্ঠান ছাড়াও ফরাসী পাড়ায় প্যাস্ট্রির দোকানে যেন প্যাস্ট্রির শিল্প প্রদর্শন হয় – এক একটি প্যাস্ট্রির সজ্জা রীতিমত তাকিয়ে দেখার মতো। স্বাদের কথা তো ছেড়েই দিলাম – প্যাস্ট্রির সাজ সজ্জা দেখেই মিষ্টি প্রেমীদের মুখে জল আসে।
ফরাসিরাও নিজেদের প্যাস্ট্রি সংস্কৃতি নিয়ে খুবই গর্বিত, ফরাসীরা যেন প্যাস্ট্রিকে মন প্রান দিয়ে ভালোবাসে। এমনকি, ফরাসী ভাষা শেখার সময়ে প্রথম যা যা শিখতে হয়, তা হল – এখানে প্যাস্ট্রির দোকান কোথায়, কত দূরে? কি ভাবে যাবো? কাছে না দূরে? ইত্যাদি।
যে দোকানে প্যাস্ট্রি পাওয়া যায়, তাকে ‘patisserie’ বলে, ও যেখানে পাউরুটি পাওয়া যায় তাকে বলে ‘boulangerie’ । আর যে কোন ফরাসী গ্রাম বা পাড়া একটি patisserie ও একটি boulangerie না হলে সম্পূর্ণ হয় না।
ফ্রান্সে প্যাস্ট্রি শুধু এক খাদ্য নয়, প্যাস্ট্রি তৈরি রীতিমত এক শিল্প, এক উচ্চশিক্ষা। দীর্ঘ দিন ধরে পড়াশোনা করে, পরীক্ষা নিরীক্ষা করে, রীতিমত লিখিত পরীক্ষা দিয়ে, প্রচুর পরিশ্রমের পরে, অন্য বড় নামী প্যাস্ট্রি সেফের সঙ্গে দীর্ঘ দিন কাজ শিখে তবে গিয়ে এক একজন নতুন প্যাস্ট্রি সেফ তৈরি হয়, প্যাস্ট্রি তৈরির ও বিক্রির লাইসেন্স পাওয়া যায় – তাই ফ্রান্সে ‘প্যাস্ট্রি সেফ’ এক সম্মানজনক পেশা। কোন কোন ফরাসী পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্যাস্ট্রি তৈরি করে, আর প্যাস্ট্রির সেই ফর্মুলা নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে।
তবে, ফরাসী প্যাস্ট্রি তৈরির ফর্মুলা যাই হোক না কেন, ফরাসী প্যাস্ট্রি চেখে দেখতে তো কোন বাধা নেই – তাই, চোখের সামনে সাজানো প্যাস্ট্রির বাক্স থেকে যে কোন একটা প্যাস্ট্রি তুলে, এক কামড় বসিয়েই অন্য এক স্বাদের দুনিয়ায় চলে যাওয়া যায় – এক এক ধরণের প্যাস্ট্রির স্বাদ নিতে নিতে ডুবে যাওয়া যায় ফরাসী প্যাস্ট্রির অনন্য স্বাদে।
উ ম ম! মজাদার !!
আমার ফ্রান্সে যাওয়া হবে না আর ওখানকার পেস্ট্রির স্বাদ নেয়াও হবেনা। আমাদের Sumi’s Hot Cake, Coopers কিংবা Mr. baker ই ভরসা।
ফ্রান্সের পেস্ট্রির জন্য ধন্যবাদ।
আচ্ছা, তবে বিশ্বায়নের যুগে এখন দেখি সব জায়গাতেই সব কিছু পাওয়া যায়, বিদেশে যেমন দেশের ভালো জিনিস পাওয়া যায়, তেমনি দেশেও বিদেশের ভালো জিনিস পাওয়া যায় – আমরা তো এখন গ্লোবাল ভিলেজের বাসিন্দা। তাই না।
ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা রইল।