চোখের সামনে নীল মেডিটেরিয়ান সমুদ্র, পাথুরে সমুদ্র সৈকত, দূরে সাগরের বুকে জেগে থাকা ফারাগ্লিওনি পাথর, সোনালি দুপুর, উজ্জ্বল দুপুরের হালকা গরমে মেডিটেরিয়ানের বুক ছুঁয়ে আসা ঠাণ্ডা হাওয়া, কখনো বাতাসে ভেসে আসা লেবু ফুলের মিষ্টি মাতাল করা সুগন্ধ, নিশ্চিন্ত রোদ্র স্নান, ঠাণ্ডা পানীয়ে চুমুক, মেডিটেরিয়ান খাওয়া দাওয়া – এই তো এক নিশ্চিন্ত ছুটি কাটানোর ছবি। আর সেই অপূর্ব প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের মাঝে ছুটি কাটানোর সমস্ত ছুটির ছবি উপহার দেয় ইতালির দ্বীপ ক্যাপ্রির সমুদ্র সৈকত মারিনা পিকোলা (Marina Piccola) বা ছোট্ট বন্দর।
ক্যাপ্রি দ্বীপের দক্ষিণ দিকের এই পাথুরে সৈকতটি, ফারাগ্লিওনি পাথরের দৃশ্যের জন্যে টুরিস্টদের কাছে আরও বেশী আকর্ষণীয়। পাহাড়ি এই দ্বীপের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে চলাফেরা করার জন্যে টুরিস্টদের জন্যে এক ছোট্ট বাস চলাচল করে – একবার টিকিট কেটে নিলেই সারাদিনই যে কোন জায়গায় চড়া যায়, নামা যায়। তাই, মারিনা পিকোলার কাছে পৌঁছে যেতে খুব একটা সময় লাগে না।
পাহাড়ের খাঁজে বাস থেমে যায়, বাস থেকে নেমে সামনেই চোখে পড়ে খাড়া সরু সিঁড়ি নেমে গেছে পাথুরে সৈকতের দিকে। চারিদিক থেকে পাহাড় ও পাথর দিয়ে ঘেরা এই সৈকতে নাকি শীতেও সমুদ্র স্নান করা যায় – শীতেও নাকি এখানের জল উষ্ণ থাকে। গরমের সময় তো কথাই নেই, অনেকেই এখানে মেডিটেরিয়ানের জলে সাঁতার কাটতে আসে, ছুটি কাটাতে আসে – তখন এখানে প্রচুর টুরিস্টের সমাগম হয়। অবশ্য শেষ এপ্রিলের ইস্টারের এই সময়টা, এখানে ঠিক জমজমাট টুরিস্ট মরশুম নয় – তাই টুরিস্টের ভিড় অনেকটাই কম।
এখানে সমুদ্রের একদম কাছে গিয়ে মনে হয় যেন কোন এক অন্য জগতের ছবির ফ্রেমে ঢুকে গেছি, প্রকৃতি এমনও সুন্দর হতে পারে? মেডিটেরিয়ানের বুকে ফারাগ্লিওনি পাথরের ছায়া পড়ে এক অদ্ভুত সুন্দর নাটকীয় ছবি তৈরি হয়েছে। এখানে এসে বুঝি ক্যাপ্রি কেন রোমান থেকে শুরু করে ইউরোপের আধুনিক যুগের শিল্পী, সাহিত্যিক, অভিনেতা, ব্যবসায়ী – সবাইকেই সম্মোহিত করেছে।
শুধু ওরাই কেন – আমরাও তো একবার ঐ অপূর্ব প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের প্রেক্ষাপটে নিজেদের নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছি, বহু দূর থেকে ছুটে গিয়েছি, মেডিটেরিয়ান সমুদ্র ছুঁয়েছি, পৃথিবীর সৌন্দর্যকে দেখার এক অদ্ভুত আনন্দে ডুবে গেছি, বিমোহিত হয়েছি – আবার পথ চলেছি। চলাই যে জীবন।