লিসবন ক্যাথিড্রালকে ঠিক ‘ক্যাথিড্রাল’ না বলে দুর্গ বললেও খুব একটা ভুল বলা হবে না – সাধারণত ইউরোপের ক্যাথিড্রাল বড়ই হয়, কিন্তু, লিসবনের প্রধান ক্যাথিড্রালটি যেন আরও বড়। লিসবন শহরের এক দিকে বিশাল জায়গা নিয়ে, বিস্তৃত হয়ে দুর্গের মতো বিরাজ করে এই রোমান ক্যাথিড্রালটি।
বারো শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে পর্তুগালের প্রথম রাজা, লিসবন শহরের প্রথম বিশপের জন্যে এই ক্যাথিড্রালটি তৈরি করেন – এই ক্যাথিড্রালটি লিসবনের সবচেয়ে পুরনো স্থাপত্য বলে বিখ্যাত।
মুরিশ পরবর্তী সময়ের প্রথম দিকে তৈরি, পর্তুগালের যে কোন ঐতিহাসিক স্থাপত্যের মধ্যে সুক্ষ কারুকাজ বেশ কমই দেখা যায়, কারণ সেই সময়ে পর্তুগালের রাজার কাছে স্থাপত্যের সুক্ষ কারুকাজের চেয়েও বেশী জরুরি ছিল খুব তাড়াতাড়ি স্থাপত্য তৈরি করা। তবে, আজকের এই লিসবন ক্যাথিড্রালটির গায়ে বহু সময়ের ছোঁয়াচ লেগেছে।
বহু শতাব্দী ধরে ভূমিকম্প লিসবন ও তার বিশাল স্থাপত্য এই ক্যাথিড্রালের জন্যে এক সমস্যাই ছিল। চোদ্দ থেকে ষোল শতাব্দীর মধ্যে ঘটে যাওয়া বহু ছোট খাটো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভূমিকম্প সহ্য করে নিলেও, আঠারো শতাব্দীতে লিসবনে ভয়ানক ভূমিকম্পে এই ক্যাথিড্রালের খুবই ক্ষয় ক্ষতি হয়েছিল।
যাইহোক, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভূমিকম্প ইত্যাদি থেকে রক্ষা পেয়ে আজকের লিসবন ক্যাথিড্রাল বারোক থেকে শুরু করে গথিক, নিও-ক্ল্যাসিকাল, Rococo ইত্যাদি, নানা স্থাপত্য পদ্ধতির, নানা সময়ের এক সংমিশ্রণ। তবে, প্রধান দরজার উপরে বড় গথিক জানালা, দু’পাশে দুই বেল টাওয়ার মিলে এই ক্যাথিড্রালের ঐতিহাসিক, মধ্যযুগীয় এক দৃশ্য বজায় রেখেছে। তাছাড়া, এই ক্যাথিড্রালের মাঝে, যেখানে এক সময় বাগান ছিল – খনন করে রোমান, ভিসিগথ, ও মুরিশ সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে – তাই ইতিহাসবিদের কাছে, ঐতিহাসিক দিক দিয়ে এই ক্যাথিড্রালের গুরুত্ব অপরিসীম।
ইউরোপে ক্যাথিড্রাল মানে শুধু যে এক ধর্মীয় জায়গা, তা নয় – এখানে ক্যাথিড্রাল মানে ইতিহাসের এক একটি পাতা, অতীত সময়ের গল্প। তাই, লিসবনের এই ক্যাথিড্রালটি, লিসবনের প্রধান এক টুরিস্ট আকর্ষণও বটে। তাছাড়া, পর্তুগালে প্রচুর ক্যাথিড্রাল, চার্চ ইত্যাদি দেখা যায় – বোধহয় ইউরোপের অন্য কোথাও এতো বেশী ক্যাথিড্রাল দেখা যায় না। তাই, লিসবনে এসে বিশাল এই ক্যাথিড্রাল বোধহয় কারোরই নজর এড়ায় না।