ডিসেম্বরের হাড় হিম করা, কণকণে ঠাণ্ডার রাতে তুলুস কেমন আলোর মালায় সাজে, তা দেখতে সেই রাতে বেড়িয়ে পড়েছিলাম। ইউরোপের অন্যান্য বহু শহরে রাত জেগে, রাতের রূপ তো দেখতে গিয়েছি। কিন্তু, যে শহরে বসবাস করা হয় সেই শহরের রাতের রূপকে যে বহুদিন অবহেলাই করে গেছি, তুলুস যে রাতের সাজানো আলোয় মালায় মোহময়ী হয়ে ওঠে, তা আমাদের কাছে বেশ অজানাই ছিল, তাই, বিশেষ ভাবে তুলুসের রাত সজ্জা দেখার উদ্দেশ্য নিয়েই সেই রাতে তুলুসের পথে হেঁটেছিলাম।
ডিসেম্বর এখানে উৎসবের মাস, আনন্দের মাস – তাই তুলুসের প্রতিটি রাস্তা আলোর মালায় সাজে। বাতাসে ভাসে উৎসবের হালকা মেজাজ, উৎসবের সৌরভ, এই সময়ে শীতের বাতাস এখানের মানুষের মনের যত আনন্দ জড়ো করে নিয়ে ঘন হয়, জমাট বাঁধে – আর শীতের নির্জন, নিঝুম শহরের রাস্তার পাশের হলুদ আলো গুলোও এক নরম মায়াবী আলোর রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করে নিয়ে মানুষের উৎসবে রং ঢেলে দেয় – ডিসেম্বরে রাতের তুলুসের চেহারাই যেন বদলে যায়, ঝকঝকে উজ্জ্বল তুলুসকে দেখি এক নতুন রূপে, নতুন আলোয়।
আর এখানে ডিসেম্বরে যখন মানুষ উৎসবের আনন্দে মাতে – কেন জানি না, এক অচেনা মনখারাপ গলার কাছে দলা পাকায়, এই সময়ে দিনের দৈর্ঘ্য কমে গিয়ে রাত বহু লম্বা হয়ে যায় বলেই বোধহয় মনখারাপ করা এক শীতলতা ঘিরে ধরে, আর তখনই দেখি রাতের তুলুস উজ্জ্বল আলোয় পথ সাজিয়েছে। সেই আলোর পথ ধরে তুলুসের নির্জনতাকে, নিজস্বতাকে দেখে নিতে পা বাড়াই।
ইউরোপের শহর গুলোয় রাত যেন আলো দিয়ে আরও লাস্যময়ী, আরও মোহময়ী, আরও রহস্যময়ী, আরও ঐতিহাসিক হয়ে সাজে – ইউরোপের ঐতিহাসিক শহরের গলিতে, রাতে যেন রূপকথারা জেগে ওঠে, মায়াজাল বিছায়। আর, আমরা দেখি, তুলুসও এর ব্যতিক্রম নয়, শীতের রাতে তুলুসের গলি গুলোয় শীতের ভারী বাতাস ও হালকা কুয়াশাকে ভেদ করে অদ্ভুত হলুদ আলো কেমন যেন গুড়ো গুড়ো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে – পরিবেশে এক স্বপ্ন ময় হলুদ মায়াজাল তৈরি করে। আর ক্রিসমাসের সাজানো নীল আলো আরও ঠাণ্ডা এক আভা ছড়ায়।
তুলুসের গারোন নদীর উপরের দুই সেতু, ক্রিসমাসের সময় ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময়ে অপূর্ব আলোর মালায় সাজানো থাকে – তাই, বছরের প্রায় সারা সময়ই এই দুই সেতু ধরে সন্ধ্যার পরে অনেকেই চলাচল করে। শহরের আলো, সেতুর আলো, রাতের গারোন নদীর কালো জলের উপরে পড়ে জলের মধ্যে টুকরো হয়ে ছড়িয়ে যায়, মিশে যায়, গারোন নদী ছুঁয়ে আসা কণকণে ঠাণ্ডা হাওয়া হাড় কাঁপিয়ে দিয়ে যায় – তবুও এই সেতু গুলোয় দাঁড়িয়ে রাতের তুলুসের মায়াবী রূপ দেখতে অনেকেরই ভালো লাগে।
রাত যত গভীর হয়, রাস্তা জনশূন্য হয়ে পড়ে, ঘড়ির কাঁটা জানান দেয় দিন পালটে গেছে, তারিখ বদলে গেছে, রাস্তা, গলি শুনশান হয়ে পড়ে – শীত আরও জাঁকিয়ে পড়ে, তবুও তুলুসের রাতের উজ্জ্বল আলোকিত রূপ দেখে দেখে আমরা যে চোখ ফেরাতেই পারি না। আর তুলুসের সেই রাত-রূপের কিছু অংশ ধরে রাখি মনে, আর কিছু ক্যামেরায়।
রাতের তুলুসের মোহময় রূপ চমৎকার!
শুভেচ্ছা আপনাকে।
ধন্যবাদ। আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই। ভালো থাকবেন।