ইতালির দ্বীপ ক্যাপ্রির সৌন্দর্যে শুধু যে ইউরোপের শিল্পী, সাহিত্যিক, কবিরাই মুগ্ধ ছিল তা নয় – গরমের সময় ইউরোপের বহু ব্যবসায়ী, ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টদের ছুটি কাটানোর ঠিকানা ক্যাপ্রি। তাই, গরমের সময়ে ক্যাপ্রির মারিনা পিকোলা সৈকতের কাছে ইউরোপের অনেক ব্যবসায়ীর দামী, বিলাসবহুল নৌকো গুলোকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়।
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে জার্মান ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট Friedrich Alfred Krupp গরমের সময়ে প্রায়ই ক্যাপ্রিতে এসে, মারিনা পিকোলার কাছে নিজের নৌকো বাঁধত, আর মারিনা পিকোলা সমুদ্র সৈকত থেকে একদম খাড়া পাহাড়ের উপরে, ক্যাপ্রির কেন্দ্রে ছিল তার রিসোর্ট, নৌকো থেকে নেমেই নির্জন পাহাড়ি পথ ধরে যাতে নিজের হোটেলে পৌঁছে যাওয়া যায় – তাই, বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকেই Krupp , ইঞ্জিনিয়ার Emilio Mayer কে এক প্রাইভেট পাহাড়ি রাস্তা তৈরির ভার দিল – যে নিজস্ব রাস্তা সোজা তাকে মারিনা পিকোলা থেকে তার রিসোর্টে নিয়ে যাবে।
সেই সময়ে খাড়া পাহাড়ের গায়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা যদিও ছিল রীতিমত এক চ্যালেঞ্জ, কিন্তু, প্রচুর তীক্ষ্ণ বাঁক নিতে নিতে তৈরি হয়ে গেল সেই রাস্তা, এতোই সরু ও তীক্ষ্ণ বাঁক এই পাহাড়ি রাস্তায়, যে কোথাও কোথাও এক বাঁক যেন আরেক বাঁকের গায়ে গিয়ে পড়েছে। যদিও Krupp এর কাজকর্ম ইত্যাদি নিয়ে ইতালিতে শেষের দিকে সন্দেহ ও কুৎসা রটেছিল, এবং অবশেষে Krupp কে ইতালি ছাড়তে হয়েছিল, কিন্তু, আজও ক্যাপ্রির সেই প্রচুর বাঁক দিয়ে তৈরি পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথের নাম Via Krupp – ক্যাপ্রির অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ।
এই পথে হেঁটে যত না পথের বাঁককে অনুভব করা যায়, বোঝা যায় – তার চেয়ে বেশী, উপর থেকে এক সঙ্গে ভালো ভাবে দেখা যায় কতোটা বাঁক নিয়ে নিয়ে সেই রাস্তা মারিনা পিকোলার দিকে নেমে গেছে– প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যে মানুষের ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার সংযোজন যেন দৃশ্যপটকে আরও সাজিয়ে দিয়েছে।
খাদের কাছে রেলিং এ ঝুঁকে দাঁড়িয়ে Via Krupp কে দেখতে দেখতে মনে হয় – জীবনও তো ঐ রাস্তার মতো – প্রচুর বাঁক দিয়ে তৈরি এক আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ। তাই নয় কি! সেই আঁকাবাঁকা পথে চলতে চলতে বুঝতেই পারি না কখন বাঁক নিয়ে নিয়েছি। আর প্রতিটি বাঁকে এক এক ধাপ করে এগিয়ে যাওয়া – এক এক স্তরের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া, সেই স্তরের সৌন্দর্য উপভোগ করা। আর সেই স্তর পরিবর্তনটিও ঐ পাহাড়ি পথের মতোই সুক্ষ ভাবে হয় – অনেকটা পথ পেরিয়ে আসার পরেই সেই পথের উচ্চতা, খাড়াই, সৌন্দর্যকে অনুভব করা যায়।
অনেক সুন্দর পাহাড়ি পথ। কিন্তু চলতে প্রান দুরুদুরু করবে মনে হয়।
শুভেচ্ছা রইলো আপনাদের।
ধন্যবাদ। হ্যাঁ একটু তো ভয় লাগছিল, কারণ উপর থেকে মাঝে মাঝে পাথর পড়ে। আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই। ভালো থাকবেন।
রাস্তার বাঁক গুলি সত্যিই অন্যরকম। কারুকাজের রুচি এবং স্থাপনার কৌশলের কারণেই এই চমৎকার পথ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
ভ্রমণের ছবি-ব্লগ ভালো লাগল, সাথে জানলাম আরও কিছু ইতিহাস।
পোষ্টের জন্যে ভালোলাগা 🙂
ধন্যবাদ। ভালো লেগেছে জেনে খুশী হলাম। শুভেচ্ছা রইল। ভালো থাকবেন।