সামারে তুলুসের স্থানীয় বাজারে বা এস্কুইরলের মোড়ের এক দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় এক তীব্র বোটকা গন্ধ এসে নাকে ঝাপটা মারে – প্রথমের দিকে বুঝি নি, কিসের গন্ধ – পরে বুঝতে পেরেছিলাম, ঐ গন্ধ মানেই তুলুসে সামুদ্রিক খাবারের মরশুম শুরু হয়ে গেছে।
তুলুস সমুদ্র থেকে একটু দূরে হলেও এখানের ফরাসীরা সামুদ্রিক মাছ, ঝিনুক, গেঁড়ি, গুগলি খুবই পছন্দ করে। শুধু কি সামার? বছরের বছরের অন্যান্য সময়েও সামুদ্রিক খাদ্য ফরাসী খাদ্য সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, এদের উৎসব অনুষ্ঠানের অন্যতম আনন্দই যে সামুদ্রিক খাদ্য। ফরাসী রেস্টুরেন্টে গিয়ে বড় এক বাটি কালো ঝিনুক ‘mussel’ এর শক্ত খোল খুলে খুলে ভেতরের নরম অংশ খাওয়া যে ফরাসী ডেলিকেসি – তা জেনে উঠতে আমাদের একটু সময় লেগেছে বৈ কি!
সামুদ্রিক ঝিনুকের যে কতো রকমের প্রজাতি হতে পারে, এবং কতো ধরণের প্রজাতিকে খাওয়া যায় তা ফ্রান্সে না এলে হয়তো অজানাই থেকে যেতো, আমরা তো কালো রঙের mussel বা সাদা oyster কে একসঙ্গে ঝিনুক বলেই জানতাম – কিন্তু, ফ্রান্সে এসে দেখি, ফরাসীরা নানা ধরণের ঝিনুককে নানা ভাবে খেতে পছন্দ করে।
অনেক সময় কালো ঝিনুক ‘mussel’ কে ফরাসী রেস্টুরেন্টের মতো করে রান্না করা যায় না, হয়তো বা রান্না করলেও রেস্টুরেন্টের সেই স্বাদ পাওয়া যায় না, তাই সামারের উজ্জ্বল রবিবারে স্থানীয় ফরাসী বাজারে ঢেলে রান্না করা ‘mussel’ বিক্রি হয় – নানা পদের ‘mussel’ , ক্রিমের সঙ্গে ‘mussel’ বা শুধু রসুন ফোড়ন দিয়ে ‘mussel’।
লক্ষ্য করি, সামুদ্রিক কালো ঝিনুকের এই পদটি কেনার সময়ে ফরাসীদের মুখের উজ্জ্বলতা সামারের উজ্জ্বল সোনালি দিনকেও হার মানায়। এক একজন বয়স্ক ফরাসী, দোকানির সঙ্গে প্রচুর কথা বলে, হাসি বিনিময় করে, ‘mussel’ এর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে, খেয়ে স্বাদ বুঝে, সামুদ্রিক বোটকা গন্ধ উপেক্ষা করে, তবে কালো ঝিনুক ‘mussel’ কেনে। ফরাসীদের রসিকতা বোধ খুবই প্রবল – কিন্তু, ওদের এই সামুদ্রিক খাদ্য অন্য কারোর পছন্দ না হলে একটু যেন ব্যথিত হয়। তবে, খাদ্য তো নিজস্ব রুচির ব্যাপার।
ফ্রান্সে সামুদ্রিক খাবারের মরশুমে রেস্টুরেন্ট গুলোয় টন টন ‘mussel’ সরবরাহ হয়। কিন্তু, গত কয়েকবছর ধরে ফরাসীদের প্রিয় এই ‘mussel’ এর উৎপাদন অনেক কমে গেছে – সমুদ্র পৃষ্টের দূষণই নাকি এই জন্যে দায়ী। শহরের সমস্ত বর্জ্য, দূষণ, কীটনাশক তো সমুদ্রে গিয়েই পড়ে, তাই সমুদ্রের সেই দূষিত জলে নরম এই সামুদ্রিক প্রাণীটির বেঁচে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়েছে – আর সেই জন্যে ফরাসীদেরও খুব মনখারাপ। তবে ফ্রান্সের পরিবেশবিদ ও ‘mussel’ উৎপাদনকারীরা ‘mussel’ কে ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় রত।