হেলসিঙ্কি শহরের আকাশরেখায় রাজত্ব করে হেলসিঙ্কি Lutheran ক্যাথিড্রাল – শহরের প্রায় যে কোন জায়গা থেকেই হেলসিঙ্কি শহরের অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ, এই ক্যাথিড্রালের সবুজ চূড়া দেখা যায় – পেঁয়াজ আকৃতির সবুজ বড় গম্বুজকে ঘিরে আরও চারটে ছোট গম্বুজ মিলে তৈরি এই ক্যাথিড্রালের ছাদ – যা কিনা, এই ক্যাথিড্রালকে ইউরোপের অন্যান্য ক্যাথিড্রাল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করেছে। আর, হেলসিঙ্কি শহরের হৃদয় কেন্দ্রের বিশাল ক্যাথিড্রাল চত্বরে এলে এই শহরের হৃদস্পন্দন অনুভব করা যায়।
এখানে দিনের নানা সময়ে, সপ্তাহের নানা দিনে মানুষের মুখ গুলো ক্রমাগত বদলে বদলে যায় – আমাদের হেলসিঙ্কি দিনগুলোর বহু সময় যেন হেলসিঙ্কি কেন্দ্রের সাদা ক্যাথিড্রাল চত্বরকে ঘিরেই কেটে যায়। দিনের কোন সময় এখানে নিঃস্ব নির্জনতা আবার কখনো উৎসব মুখরতা – হেলসিঙ্কির জীবন যাপনে এই বিশাল সাদা ক্যাথিড্রালের নীরব উপস্থিতি যেন গভীর ভাবে জড়িয়ে থাকে।
জুলাইয়ের উজ্জ্বল ছুটির দিনে এখানে সর্বদাই কোন না কোন উৎসব লেগে থাকে – সে দলে দলে টুরিস্টের ঘোরাফেরা থেকে শুরু করে রয়্যাল আর্মির মিউজিক সহযোগে কুচকাওয়াজ হোক – ছুটির দিনে এই চত্বরটি সব মিলিয়ে খুবই জমজমাট। আর ক্যাথিড্রালের বিশাল সিঁড়িতে বসে গায়ে রোদ নিতে নিতে হেলসিঙ্কির জীবনযাত্রা দেখাও যেন সেই উৎসবেরই এক অঙ্গ।
তাছাড়া, জুলাইয়ে হেলসিঙ্কির আবহাওয়াও খুবই মনোরম ও সূর্যও আকাশে বহু সময় ধরে থাকে, রাতের দৈর্ঘ্যও তখন খুবই ছোট – আর দিনের উজ্জ্বল রোদের উষ্ণতার মধ্যে এক অদ্ভুত আরামদায়ক আমেজ থাকে। আর ছুটির দুপুরে সেই আরামদায়ক আমেজের সঙ্গে যখন হেলসিঙ্কি রয়্যাল আর্মির সঙ্গীতের তাল ও ছন্দ মিলে যায় – ক্যাথিড্রালের সামনে উপস্থিত জনতার মুখে এক আনন্দের ছাপ দেখা যায়। এক নতুন দেশে এসে সেই দেশের কোন এক উৎসবের অংশীদার হতে পেরে সবাই যেন ধন্য হয়ে যায় – বেড়ানোর আনন্দে যেন রং লাগে।
ক্যাথিড্রালের বিশাল সিঁড়ি স্থানীয় সময় কাটানোর এক জায়গা, সামনের বিশাল চত্বরে রাশিয়ান শাসক Emperor Alexander II এর ব্রোঞ্জ স্ট্যাচু নজর কেড়ে নেয়। যখন এই স্ট্যাচুটি এই চত্বরে স্থাপন করা হয়েছিল ফিনল্যান্ড তখন রাশিয়ার শাসনে ছিল। পরবর্তী সময়ে রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের যুদ্ধ ও নানান রাজনৈতিক টানাপড়েনেও ফিনিস মানুষেরা কিন্তু এই স্ট্যাচুটির কোন ক্ষতি করে নি, বরং সেই রাশিয়ান শাসকের প্রতি ফিনিস মানুষদের কৃতজ্ঞতার চিহ্ন স্বরূপ, স্ট্যাচুটি সসম্মানে এই চত্বরেই রয়ে যায়। বর্তমানে স্ট্যাচুটিকে ঘিরে ফুলের বাগান, দৃষ্টিনন্দন বসার চেয়ার জায়গাটির শোভা বাড়িয়েছে।
ক্যাথিড্রাল স্কোয়ারের সিঁড়িতে, অচেনা মানুষের মাঝে বসে আমাদের হেলসিঙ্কি দিনকে বয়ে যেতে দেখি। মাঝে মাঝে মনে হয়, জীবনের চলার পথ খুবই একঘেয়ে ঘটনা বিহীন হয়ে যায়, প্রতিটি দিন ঠিক যেন আগের দিনটিকেই অনুসরণ করে চলে, কিন্তু, হঠাৎ কোন এক অচেনা দেশের অচেনা জায়গার ছবির ফ্রেমে যখন নিজেদেরকে দেখি – ভাবি, ‘আমরা সেদিন সেখানে ছিলাম, সেই দেশের অচেনা গলি পথে হেঁটেছিলাম, দেখেছিলাম, অচেনা হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিয়েছিলাম, সেইদিন অচেনা মানুষের ভিড়ে আমাদের মুখও মিশে ছিল, বাল্টিক সাগর ছুঁয়ে আসা হাওয়া আমাদের চুল উড়িয়ে দিয়েছিল!’ এক অদ্ভুত ভালো লাগা সেই একঘেয়ে জীবনে রং ঢালে – আর সেখানেই বোধহয় ভ্রমণের সার্থকতা, জীবনকে এক অনন্য অভিজ্ঞতা উপহার দেয় ভ্রমণ।