ব্রাসেলসের ঢাকা বাজারে (Galeries Royales Saint-Hubert, Brussels, Belgium)

সম্ভবত আধুনিক সুপার মার্কেটের প্রাচীন রূপ ব্রাসেলসের গ্যালারী রয়্যাল সেন্ট হুবে (Galeries Royales Saint-Hubert) মার্কেট। ইউরোপে এই ধরণের ঢাকা মার্কেটের শুরুটা হয়েছিল প্যারিসে, আঠারো শতাব্দীতে ফরাসী রাজা লুই চোদ্দর এক আত্মীয়ের খুবই অর্থাভাব দেখা দিলে, সে তাঁর বাগানের সামনের কিছু অংশ ছোট দোকানদারদের ভাড়া দিয়েছিল, প্যারিসের রয়্যাল প্যালেসের খুব সামনেই ছিল তাঁর বাড়ী – কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল প্রচুর দোকান তৈরি হয়ে জায়গাটা জমজমাট হয়ে গেল, শান্ত সেই জায়গায় নানা ধরণের মানুষের ভিড় হতে শুরু করল, এমনকি, চোর, পকেটমারদেরও রয়্যাল প্যালেসের সামনে অবাধ আনাগোনা বেড়ে গেল, কিছুদিনের মধ্যেই প্যারিসের সেই প্রাচীন রয়্যাল গ্যালারীর বদনাম রটে গেল।

তাই, প্যারিসের রয়্যাল প্যালেসের সামনের সমস্ত দোকানদারদের সরিয়ে দিয়ে অন্য এক ঢাকা ও আরও সুন্দর সাজানো জায়গায় ব্যবস্থা করে দেওয়া হল – যেখানে নানা ধরণের মানুষের যাতায়াতের দিকে করা নজর রাখা যায়, পাহারার ব্যবস্থা করা যায়। যথারীতি, এই ধরণের ঢাকা বাজার ব্যবস্থা ভদ্রলোকদের সুরক্ষা দিল, ইউরোপিয়ানদের সেটা খুবই পছন্দ হয়ে গেল। তাছাড়া, এই ধরণের বাজার ব্যবস্থা ইউরোপের বৃষ্টি বাদল, বাজে আবহাওয়ার পালাবদল ব্যবসায় প্রভাব ফেলবে না। সব মিলিয়ে এই ধরণের ঢাকা বাজার খুবই জনপ্রিয় হয়ে গেল। সেই সময়ে প্যারিসের ভদ্রলোকদের সময় কাটানোর এক ঠিকানা হয়ে গেল ঐ ধরণের ঢাকা দেওয়া বাজার।

যাইহোক, উনিশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বেলজিয়ামের স্বাধীনতার পরেই বেলজিয়ামকে ঢেলে সাজানোর জন্যে এই ধরণের বেশ কয়েকটা সুন্দর বাজার তৈরি হয়েছিল, তার মধ্যে গ্যালারী রয়্যাল সেন্ট হুবে অন্যতম। বর্তমানে ব্রাসেলসের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এই ঐতিহাসিক ঢাকা বাজার।

কাঁচ ও কাস্ট আয়রন দিয়ে তৈরি ছাদ দিয়ে অনায়াসে দিনের আলোর অবাধ যাতায়াত। যদিও, দু’ধারের দামী ব্র্যান্ডের শো রুমের জিনিসপত্র ছোঁয়া যায় না, শুধু দেখা যায় – তবুও এখানে সর্বদাই টুরিস্টদের ভিড় লেগেই থাকে। এই বিশাল ঢাকা বাজারের তিনটে অংশ – একদিকে রাজার বড় গ্যালারী (Galerie du Roi), রানীর গ্যালারী (Galerie de la Reine) ও অপেক্ষাকৃত ছোট রাজপুত্রের গ্যালারী (Galerie des Princes)।

উনিশ শতাব্দীর মাঝামঝি এই বাজার পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর, সাজানো ও উজ্জ্বলতম আলোকিত বাজার ছিল। চারিদিকে ঝকঝকে আলোয় সাজানো বাজার, রেস্টুরেন্ট, থিয়েটার, বর্তমানে সিনেমা হল সবই এই ঢাকা বাজারের ভেতরে স্থান পেয়েছে – তাই সেই সময়ের স্থানীয় মানুষের মনোরঞ্জন বা দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে একটু সময় কাটানো অথবা কেনাকাটি করার ঠিকানা ছিল এই বাজার।

এমনকি, এই বাজারের কফি হাউসগুলো উনিশ শতাব্দীতে সাহিত্য আলোচনার প্রধান কেন্দ্র ছিল। সেই সময়ে ফরাসী কবি বোঁদলেয়ার থেকে শুরু করে ভিক্টর হুগো, আলেকজান্ডার ডুমোর মতো বিখ্যাত ফরাসী সাহিত্যিকদের সাহিত্য আলোচনার প্রিয় ঠিকানা ছিল এই বাজারের কফি হাউস।

আজও এখানে, একবিংশ শতাব্দীর বহু আধুনিকতার মধ্যেও এই প্রাচীন রয়্যাল গ্যালারীর প্রাচীন মর্যাদাকে সযত্নে অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করা হয়, প্রাচীন পরিবেশ বজায় রাখা হয় – আর সেই জন্যেই টুরিস্টদের কাছে এই প্রাচীন রয়্যাল গ্যালারীর এতো আকর্ষণ।

অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে, আমাদের ব্রাসেলস ভ্রমণে বৃষ্টি যেন পিছু নিয়েছে, বাইরে অঝোরে বৃষ্টি, দুপুরেই সন্ধ্যার আঁধার নেমেছে, সঙ্গে তেমনি ঠাণ্ডা, কিন্তু এই ঐতিহাসিক ঢাকা বাজারের দু’পাশের সাজানো দোকানের আলোর ঝলকে চোখ ধাঁধায়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Belgium, Europe, Travel, Western-Europe and tagged , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s