ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দরতম টাউন স্কোয়ারের মধ্যে অন্তর্গত ব্রাসেলস শহর কেন্দ্রের স্কোয়ার ‘Grand Place’। ছিয়ানব্বই মিটার উচ্চতার, আকাশ ছোঁয়া টাউন হলের চূড়া এই স্কোয়ারের দৃশ্যপটে রাজত্ব করে, আর চারিদিকের মাঝারি মাপের সাজানো, অলংকৃত স্থাপত্য এই স্কোয়ারকে এক স্বতন্ত্রতা এনে দেয়, যা কিনা ইউরোপের অন্যান্য শহরের স্কোয়ার গুলো থেকে ব্রাসেলসের এই স্কোয়ারকে সম্পূর্ণ আলাদা করে তুলে ধরে।
অক্টোবরের মাঝামঝি সময়ে আমাদের ব্রাসেলস দিনটি ছিল খুবই ভেজা ভেজা। তাছাড়া, ভেজা বাতাসে যেমন ছিল মারাত্মক ঠাণ্ডার দাঁত, তেমনি অনবরত ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি, মেঘে ঢাকা ঘন কালো আকাশ – সব মিলিয়ে তখনই বুঝেছিলাম ইউরোপের মানুষ কেন আবহাওয়া নিয়ে এতো আলোচনা করে। আর ইউরোপের ঐতিহাসিক শহরের রহস্যময় গলি গুলোয়, এমনি দিনে সন্ধ্যা যেন খুব তাড়াতাড়িই উঁকি দেয়।
এমনি বৃষ্টি দিনে ইউরোপের যে কোন শহর গুলোয় কেমন যেন এক বিষণ্ণ, মনখারাপ করা চাদর জড়ানো থাকে। তবে, ব্রাসেলসে এসে বৃষ্টি ও মেঘলা আকাশ দেখে আমরা কিন্তু দমে যাই নি, বরং বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ব্রাসেলসকে আবিষ্কার করতে চেয়েছিলাম। ব্রাসেলস আমাদের বিমুখ করে নি, বরং অবাক হয়ে দেখি, বৃষ্টি ও মেঘ মিলে ব্রাসেলস কেন্দ্রের বিখ্যাত স্কোয়ারের ঐতিহাসিক স্থাপত্য গুলোর গায়ে গায়ে যেন আরও বেশী ঐতিহাসিকতা, রহস্যময়তা জুড়ে দিয়েছে।
যাইহোক, ব্রাসেলসের অন্যতম ব্যস্ত এই জায়গা ব্রাসেলসের অর্থনৈতিক কেন্দ্র বলা যায়, চারিদিকে রেস্টুরেন্ট, বাজার, দোকান সব মিলিয়ে এই জায়গা ব্রাসেলসের হৃদস্পন্দন। ব্রাসেলসের ছয়শো বছরের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সমস্ত চড়াই উৎরাইয়ের সাক্ষী এই স্কোয়ার ও তার আশেপাশের স্থাপত্য।
সতেরো শতাব্দীতে ব্রাসেলস শহরেকে চারিদিক দিয়ে ফরাসী আর্মি ঘিরে নিয়েছিল ও এই স্কোয়ারের প্রায় সমস্ত স্থাপত্য গুলোর উপরে ফরাসী আর্মি কামান দেগেছিল – কয়েকটা স্থাপত্য ছাড়া প্রায় সমস্ত স্থাপত্য ধুলিস্যাত হয়ে গিয়েছিল, কি ভাবে যেন, অদ্ভুত উপায়ে টাউন হলের চূড়াটি সেই ধ্বংসলীলা থেকে বেঁচে গিয়েছিল। পরে, এই স্কোয়ারের ব্যবসাদাররা মাত্র সাত বছরের মধ্যেই স্কোয়ারের চারিদিকের সমস্ত স্থাপত্য পুনরায় তৈরি করেছিল।
বেলজিয়ামের খোলা অর্থনীতির সমস্ত সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আজ এই স্কোয়ার ব্রাসেলসের এক জমজমাট জায়গা, ব্যাবসায়িক আদান প্রদানের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ও টুরিস্ট আকর্ষণ। ইউরোপের যে কোন শহরের ছন্দে তাল মেলাতে হলে অন্তত একবার সেই শহরের প্রধান স্কোয়ারে পা রাখতে হয়। ব্রাসেলসের এই স্কোয়ারে এসে এই শহরের বৈভবের আঁচ পাওয়া যায়, দেখা যায় এই শহরের জীবন ছবির ঝলক।