উজ্জ্বল দিনে মেডিটেরিয়ানের ঝকঝকে স্বচ্ছ নীল জলের মধ্যে হঠাৎ করে বিশাল তিনটে স্তম্ভাকৃতি পাথরের নাটকীয় উপস্থিতি বোধহয় পৃথিবীর যে কোন মানুষকেই মুগ্ধ করে, তাই গরমের সময় বহু প্রাচীন কাল থেকেই ইতালির ক্যাপ্রি বহু টুরিস্টের প্রিয় গন্ত্যব্য। দূর থেকে মেডিটেরিয়ানের নিল বুকে জেগে থাকা ঐ পাথুরে দ্বীপ তিনটেকে খুব ছোট্ট বলেই মনে হয় – কিন্তু একদম কাছে পৌঁছে গেলে ওদের বিশালতা বোঝা যায়, এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়।
প্রকৃতির বুকে সমুদ্র ও পাথরের বহুদিনের ধৈর্যের ফলে তৈরি হয় এমন অপরূপ নয়ন ভোলানো সৌন্দর্য, এমন অপরূপ সৌন্দর্য তৈরির জন্যে পাথরের বুকে সমুদ্র দীর্ঘদিন ধরে আছড়ে পড়েছে, ঢেউ ভেঙ্গেছে। সমুদ্র বহু সাধনায় তৈরি করেছে বিশেষ ধরণের পাথর – ইতালিয়ান যাকে আদর করে একসঙ্গে বলে ফারাগ্লিওনি (Faraglioni)।
আবার ঐ তিনটে অদ্ভুত পাথরের আলাদা করে নামও দিয়েছে – ক্যাপ্রির মূল দ্বীপের সঙ্গে যে পাথরটি এখনো যুক্ত তার নাম- Stella , দ্বিতীয় পাথরটির নাম Faraglione di Mezzo ও তৃতীয়টির নাম Scopolo । তৃতীয় দ্বীপে নাকি লুপ্ত প্রায় প্রজাতির নীল রঙের গিরগিটী বাসা বেঁধেছে – দীর্ঘ দিন ধরে সমুদ্রের নীল রঙের সঙ্গে মিশে যেতে যেতে, ক্যামুফ্লেজ করতে করতে ওদের গায়ের রংই সম্পূর্ণ নীল হয়ে গেছে।
ক্যাপ্রির ছবির সঙ্গে ঐ তিনটে পাথুরে দ্বীপ এমন ভাবে জড়িয়ে আছে যে ক্যাপ্রি মানেই যেন নীল সমুদ্রের বুকে জেগে থাকা ফারাগ্লিওনি পাথর। হয়তো বহু টুরিস্ট সামারের উজ্জ্বল দুপুরে মেডিটেরিয়ানের উষ্ণ জলে যেখানে ফারাগ্লিওনির ছায়া পড়েছে সেখানে সাঁতার কাটার স্বপ্ন দেখে, গা ভাসানোর স্বপ্ন দেখে। তাই, এখানে এসে অনেকেই জীবনের অবিস্মরণীয় ভ্রমণ অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ করে নিতে ফারাগ্লিওনির ছায়ায় মেডিটেরিয়ানের জলে নেমে পড়ে, গা ভাসায়।
প্রাচীন কালে রোমানরাও মেডিটেরিয়ানের বুকে ঐ পাথুরে দ্বীপের অপূর্ব সৌন্দর্যের মোহে পড়েছিল, তাই, ফারাগ্লিওনি রকের দিকে মুখ করে তৈরি সেই সময়ের বহু ভিলা এখনো দেখা যায়। শুধু রোমান নয়, আঠারো ও উনিশ শতাব্দীর বহু শিল্পী, সাহিত্যিকরা প্রেরণার খোঁজে ক্যাপ্রিতেই বাসা বেঁধেছিল।
যেখানে মেডিটেরিয়ানের নীল জলে পাথুরে সৌন্দর্য আদি অনন্তকাল ধরে জেগে রয়, সেখানে গিয়ে সেই অপূর্ব নাটকীয় সৌন্দর্যের ক্ষণিক অংশীদার হয়ে নিজেদেরকে ধন্য বলে মনে হয়, মনে হয়, মানুষ সবই পারে, কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে তৈরি করতে পারে না, প্রকৃতির শক্তির কাছে, প্রকৃতির সৌন্দর্যের কাছে মানুষ হেরে গেছে। তাই, মানুষ প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে, নিজেকে সমর্পণ করে দেয়।