লেক জেনেভায় নৌকো পথে Montreux এর দিকে যেতে যেতে চোখে পড়ে এক ক্যাসল দ্বীপ – Château de Chillon, প্রাচীন এই ক্যাসল সুইজারল্যান্ড তথা ইউরোপের এক বিখ্যাত ক্যাসল, সম্পূর্ণ দ্বীপ জুড়েই যেন ক্যাসলটির অবস্থান। প্রাচীন এই মধ্যযুগীয় ক্যাসল প্রাচীনকালে যুদ্ধ বন্দীদের কারাগার হিসাবে ব্যবহৃত হতো, বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের এক অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ।
তাছাড়া, এই ক্যাসল আরও বিখ্যাত হয়েছে লর্ড বায়রনের বিখ্যাত কবিতা ‘The Prisoner Of Chillon’ এর জন্যে, লর্ড বায়রন যখন সুইজারল্যান্ডের এই অঞ্চলে বেড়াতে আসেন, এই ক্যাসলে বন্দী François de Bonivard এর জীবনী তাঁকে ছুঁয়ে যায়, সৃষ্টি হয় ছন্দে গাঁথা জীবন মুখী কবিতা।
লেক জেনেভার পাশের এই অঞ্চল লর্ড বায়রনের সময়ে যেমন ছিল, আজও নাকি তেমনি আছে, প্রায় কিছুই বদলায় নি – তাই বায়রনের প্রেরণার অক্ষত রূপটিকে দেখতে ক্যাসলের দরজার প্রতিদিন বহু টুরিস্ট হানা দেয়। ক্যাসলের ভেতরের বদ্ধ হাওয়ায় অতীতের থমকানো সময়, রহস্যকে ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করে বহু মানুষ।
যাইহোক, প্রকৃতির কাছে মানুষকে সম্মোহিত করার এক তীব্র ক্ষমতা আছে, আর সেই প্রকৃতি যদি সুইস আল্পসের অপূর্ব সবুজ সাদা প্রকৃতি হয়, মানুষ তো আরও বেশী সম্মোহিত হয়, প্রকৃতির কাছে নিজের সত্তাকে নিবেদন করে দেয়।
তাই, রোম্যান্টিক যুগের ব্রিটিশ কবি ও সাহিত্যিকদের প্রেরণা ছিল সুইস আল্পসের সম্মোহনকারী সৌন্দর্য। আর সেই রোম্যান্টিক যুগের কবিদের ছুটির ঠিকানা ছিল সুইস আল্পস। এখানের হাওয়ায় যেন ছিল সাহিত্য সৃষ্টির প্রেরণা। লর্ড বায়রন যে সময়ে সুইজারল্যান্ডের এই অঞ্চলে বেড়াতে আসেন, সেই সময়ে তাঁর সমসাময়িক অনেক সাহিত্যিক ও কবি এখানে বেড়াতে আসতো। এখানে Frankenstein এর স্রষ্ঠা Mary Shelley র সঙ্গে লর্ড বায়রনের দেখা হয়েছিল, এমনকি Frankenstein এর সৃষ্টিও এখানেই হয়েছিল।
অপূর্ব প্রকৃতি, আবহাওয়া, লেক জেনেভার বুক ছুঁয়ে আসা বাতাস সবই যেন সাহিত্য আলোচনায়, কাব্য সৃষ্টিতে ইন্ধন যুগিয়েছিল।
আমাদের নৌকো যখন Château de Chillon এর সামনে এসে একটু দম নিল, মেঘলা আকাশের প্রেক্ষাপটে, খুব কাছ থেকে দেখে ক্যাসলটিকে খুবই গম্ভীর, রহস্যময়, প্রাচীন বলেই মনে হল। মনে হল – সত্যি এই ক্যাসলের গায়ে গায়ে প্রাচীন জীবনের বহু গল্প বুঝি লুকনো আছে। আর সেই জীবন যখন জীবনকে প্রেরণা দেয় সৃষ্টি হয় অমর সাহিত্য, কবিতা।