পোর্ত শহরের গায়ে, এই শহরের জীবন যাপনের ছন্দে যেন অতীত ও বর্তমান সময়ের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ আছে। যে শহরের কোন এক প্রাচীন গলিতে এখনো নস্টালজিক বাতাস আটকে থাকে – সেই শহর তো বহু বিদেশী মানুষের ছুটির ঠিকানা হবেই। এই প্রাচীন শহরে পা রাখা মানে ইতিহাসের পাতায় সশরীরে হানা দেওয়া। আর এই শহরের সমস্ত প্রাচীনতা, আধুনিকতাকে ছুঁয়ে বয়ে চলেছে শান্ত সুন্দর নদী – দুরো। জুলাইয়ের উজ্জ্বল দুপুরের অদ্ভুত হলুদ রোদ, দুরো নদীর শান্ত বয়ে চলা, প্রচুর নৌকো, ঘন নীল আকাশ সবাই মিলে এক অপূর্ব ছবি এঁকেছে।
দুরো নদীর একদিকে প্রাচীন পর্তুগীজ সভ্যতার আধুনিক রূপ, আরেক দিকে তুলনামূলক নতুন রূপ – Vila Nova de Gaia, আর পোর্ত শহরের এই দুই অঞ্চলকে জুড়েছে লোহার তৈরি সুন্দর এক দোতলা সেতু – Ponte Luís I । সম্ভবত ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দর সেতু গুলোর মধ্যে অন্যতম এই সেতু – নীচের তলা দিয়ে গাড়ি চলাচল করে, অবশ্য পাশে হাঁটার পথও আছে, আর, একদম উপরের তলা দিয়ে ট্রাম চলাচল হয়, ও হাঁটা পথ।
এই সেতু পোর্ত শহরের অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ, পোর্ত শহরে এসে এই সেতু দিয়ে হেঁটে দুরো নদী পার না হলে যেন এই শহরকে অনুভব করার অনেক অভিজ্ঞতা বাকি রয়ে যায়। এখানে এসে দাঁড়ালে দুরো নদীর বুক ছুঁয়ে ছুটে আসা দুরন্ত হাওয়া ছুঁয়ে যায়, যত দূর চোখ যায় ঐতিহাসিক পোর্ত শহরের বিস্তার দেখা যায়, দেখা যায় নদী কেন্দ্রিক প্রাচীন ইউরোপের সভ্যতার ছবি। লোহার তৈরি এই সেতুটি পোর্ত বাসীদের জীবন যাপনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে – তাই তো এই সেতুকে ‘Property of Public Interest’ খেতাব দেওয়া হয়েছে।
প্রায় একশো কুড়ি বছর আগে তৈরি এই লোহার সেতুর উপর দিয়ে আজকের পোর্ত শহরের আধুনিক ট্রাম ছুটে চলে, নীচের সেতুটি দিয়ে অবিরাম ছোট গাড়ি, ট্রাক চলাচল করে – ভাবা যায়, যখন তৈরি হচ্ছিল কতটা দূরদর্শিতা দিয়ে তৈরি হয়েছিল লোহার এই সেতু।
এই সেতু ধরে ধীর পদক্ষেপে চলতে চলতে পোর্ত শহরকে দেখা টুরিস্টদের এক অন্যতম বিনোদন। এই সেতু ও তার আশপাশের জীবনধারা এতোই চলমান, জীবনী শক্তিতে ভরপুর যে সময় এখানে উড়ে যায়। স্থায়িত্বের প্রতীক, দৃঢ়তার প্রতীক এই সেতুকে ঘিরে পোর্ত বাসীর জীবনের নানা সময়ের রং বদলায় – আর নানা সময়ের সেই রংবদলের কয়েক মুহূর্তের রং যে আমাদের জীবনের ক্যানভাসেও লেগে যায়।
বিস্ময়কর!
অনেক ভালো লাগলো দোতলা সেতুর পোস্টটি।
শুভেচ্ছা রইলো।
ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা জানাই। ভালো থাকবেন।