সুইস রাজধানী শহরের প্রধান ঐতিহাসিক কেন্দ্রে ঢোকার মুখে বিশাল ঘড়ির টাওয়ারটি কিন্তু কিছুইতেই নজর এড়ায় না – প্রায় আটশো বছর পুরনো মধ্যযুগীয় এই ঘড়ি ঘরের দিকে এই শহরে নতুন আগত টুরিস্টদের ঠিকই নজর চলে যায় – সুইসরা এই ঘড়ি টাওয়ারকে Zytglogge টাওয়ার বলে জানে, যার মানে time bell, সময়ের ঘণ্টা।
প্রচুর বার আগুন থেকে শুরু করে নানা ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সংস্কার, সংরক্ষণ পেড়িয়ে কখন যে এই ঘড়িটি বয়স আটশো হয়ে গেছে তা হয়তো সুইসদেরও খেয়াল নেই, আসলে এই রাজধানী শহরের জীবন যাপনের সঙ্গে এই টাওয়ারটি অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে আছে – এই শহরের কতো মানুষ যে প্রতিদিন টাওয়ারটিকে চোখের সামনে দেখে দেখে বড় হয়েছে, বুড়ো হয়েছে, সেই ওজর অমর টাওয়ারের বয়সের আর কেই বা হিসাব রাখে।
তেরো শতাব্দীর শুরুর দিকে তৈরি এই টাওয়ার সুইস রাজধানী শহরের এক বিখ্যাত প্রতীক – সেই সময় শহর প্রতিরক্ষার জন্যে ওয়াচ টাওয়ার হিসাবে ব্যবহার হোতো, পরে পনেরো শতাব্দীতে যোগ হয় কারুকার্যে ভরা astronomical clock টি, আজ এই ঐতিহাসিক টাওয়ার ও আকাশ ঘড়ি বার্নের এক অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ ও ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। অদ্ভুত এই টাওয়ারটি – একই টাওয়ার, অথচ পূর্ব ও পশ্চিম, দুই দিক থেকে দুই রকম বলে মনে হয়।
সুইস রাজধানীর রাজপথ ধরে হেঁটে গেলে, দূর থেকেই এই বিখ্যাত ঘড়ি ঘরকে দেখা যায়, রাজধানীর পুরনো অংশের এক বড় রাজপথ ঐ ঘড়ি ঘরের নীচে এসে থামে, এখানে এসে বর্তমান সময় যেন মধ্যযুগে ফিরে যায়, এখানে এসে টুরিস্টদের পথ চলা থেমে যায় – এখানে ক্ষণিক দাঁড়িয়ে এই ঐতিহাসিক সময়ের সৌন্দর্যকে উপভোগ করতেই হয়।
প্রতি ঘণ্টায় ঘড়ির উপরের পুতুলরা নড়াচড়া করে সময় জানান দেয়, এই ঘড়িতে দেখানো সময় বার্নের অফিসিয়াল সময়ের বেঞ্চমার্ক। ঐতিহাসিক এই টাওয়ারের নীচে সুইস রাজধানীর আধুনিক ব্যস্ততা ও ঐতিহাসিক মধ্যযুগের স্থবিরতা, দুইই যেন মিলেমিশে যায় – একবিংশ শতাব্দীতে এক আধুনিক-ঐতিহাসিক সুইস ছবি তৈরি হয়।
এই টাওয়ারের astronomical clock টি আকাশে নানা রাশি, সূর্য, চন্দ্রের অবস্থান থেকে শুরু করে দিনের আলো, দিনের ঘণ্টার হিসাব, দিগন্ত আকাশে সূর্যের অবস্থান কোণ, মাস, দিন – সবই নির্ভুল, নিখুঁত ভাবে, সারা বছর ধরে জানান দিয়ে যায়। জানান দিয়ে যায় এই শহরের মানুষের ভালো, খারাপ সময়কে, বাঁচার সময়কে, জেতার সময়কে, হাসি আনন্দের সময়কে।
সময় – এক অদ্ভুত প্রহেলিকাময় অনন্ত কালের নাম সময়, পৃথিবীর সবার কাছেই আছে, আবার কারোর কাছেই নেই। বহু প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ সময়কে বুঝতে চেয়েছে, এর কঠোর অঙ্গুলি চালনাকে জানতে চেয়েছে – প্রকৃতি থেকে শুরু করে মানুষের জীবনের জন্ম মৃত্যু, হার জিত সবই এক নির্দিষ্ট সময়ের কড়া বাঁধনে বাঁধা। মানুষ চিরকালই সময়ের সেই গহীন রহস্যকে জানতে চেয়েছে, বুঝতে চেয়েছে, ধরতে চেয়েছে।