স্প্যানিশ সিঁড়ির ধাপে ধাপে (Spanish Steps, Rome, Italy)

রোমের স্থানীয় ছন্দে গা ভাসাতে হলে, রোমে এসে রোমানরা কি করে তা দেখতে হলে অন্তত একবার স্প্যানিশ স্টেপের কাছে আসতেই হয়, গরমের বিকেলে এই প্রশস্ত দীর্ঘ সিঁড়ি রোম বাসী ও টুরিস্টদের সময় কাটানোর এক অতি প্রিয় জায়গা। রোমের এই সিঁড়ি ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ ও প্রশস্ত সিঁড়ি।

এই সিঁড়ি নীচের Piazza di Spagna স্কোয়ার ও উপরের  Trinità dei Monti চার্চের স্কোয়ারকে জুড়েছে। যে সময়ে রোমের এই বিখ্যাত সিঁড়িটি তৈরি হয়েছিল উপরের চার্চটি ফ্রান্সের দখলে ছিল, তবে, রোমের বিখ্যাত এই সিঁড়িটির নাম কেন স্প্যানিশ সিঁড়ি হল, সে নিয়ে প্রশ্ন তো প্রথমেই ছিল – আসলে নীচে স্প্যানিশ এমব্যাসি ও স্প্যানিশ স্কোয়ারের সঙ্গে জুড়ে যাওয়ার ফলেই এই নামকরণ। বহু সিনেমা ও এ্যালবামে এই সিঁড়িকে দেখা গেছে, এমনকি গরমের সময় এই সিঁড়ির ধাপে মিউজিক শো ও নানান প্রোগ্রাম চলে।

শেষ এপ্রিলের বিকেলের দিকে রোমে আবহাওয়া খুবই আরামদায়ক, মনোরম, রোমের ভিড়ের স্রোতের সঙ্গে চলতে চলতে বিকেলের শেষে যখন স্প্যানিশ স্টেপের সামনে পৌঁছলাম, দেখি, সিঁড়ির ধাপে পা রাখাই মুশকিল – প্রতিটি সিঁড়ি স্থানীয় মানুষের আরামকেদারা – শুয়ে বসে খেতে খেতে সময় কাটাচ্ছে অনেকেই, এখানে হয়তো কেউই সিঁড়ির ধাপ বেয়ে উপরে যায় না, ধাপে বসে বিশ্রাম নিতেই পছন্দ করে। শুধু স্থানীয় মানুষই নয়, সিঁড়ির ধাপ গুলো টুরিস্টদেরও দখলে – আসলে এখানে বসে বসে রোমের জনজীবনের স্রোত দেখা, ভিড়ের অচেনা মানুষ দেখা এক অনন্য অভিজ্ঞতা, নতুন দেশ, নতুন সংস্কৃতির ব্যপারে জানা ও দেখার আরেক সহজ পদ্ধতি।

যাইহোক, শহরের মধ্যে এক দীর্ঘ চওড়া সিঁড়ি, কেনই বা স্থানীয় ও টুরিস্টদের মধ্যে সময় কাটানোর জন্যে এতো জনপ্রিয় হল, কারণ জানা নেই। তবে মনে হয়, সিঁড়ির নীচের অপূর্ব ফোয়ারা  Fontana della Barcaccia ও তাকে ঘিরে ইতালির বিখ্যাত ব্র্যান্ডের সমস্ত সাজানো বড় দোকানপাট, স্কোয়ারে নানা ধরণের মানুষের জমায়েত এই জায়গার মুখ্য আকর্ষণ – এখানেই রোমের উচ্ছল, চলমান রঙিন জীবন স্রোত দেখা যায়, দেখা যায় রোমের এক জীবন্ত ছবি, মানুষ।

মানুষ ও স্থাপত্য এখানের মুখ্য বিষয়, তাই হয়তো বহু ইংরেজ ও ফরাসী চিত্রকর, সাহিত্যিক, কবির প্রিয় জায়গা ছিল এই জায়গা। সিঁড়ির শুরুতেই ডানদিকের বাড়ীতে ইংরেজ কবি জন কিটস তাঁর শেষ জীবন কাটিয়েছিলেন – আজ সেই বাড়ী তাঁর স্মৃতিতে সাজানো এক ছোট্ট মিউজিয়াম।

পৃথিবীর এক কোণের এক ছোট্ট জায়গা, তার উষ্ণতা, চঞ্চলতা, সজীবতা দিয়ে মানুষের স্মৃতিতে কেমন করে যেন জায়গা করে নেয়, ভালো লাগায় ভরিয়ে দেয় মন, আর মানুষও যুগ যুগ ধরে এখানে ফিরে ফিরে আসে, সঙ্গে নিয়ে ফেরে সেই জায়গার এক টুকরো স্মৃতি, এক মুঠো সৌরভ।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Italy, Southern-Europe and tagged , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s