জীবনের এতো দিন ফুলকপিকে তো সাদাই জেনে এসেছি, সাদাই দেখে এসেছি। ফুলকপি আবার সবুজ হল কি করে! ফ্রান্সে এসে আমার প্রথম পরিচয় হল সবুজ ফুলকপি – ব্রকলির সঙ্গে। কি ভাবে এই নতুন সবজিটিকে বাগে আনবো, সবজিটির স্বাদ গন্ধের সঙ্গে ভারতীয় স্বাদ জুড়ে দেবো কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। দেশের রান্নায় এই সবজিটির স্বাদ যেন ঠিক করে খোলে না। তাই ব্রকলি নিয়ে একে একে বহু পরীক্ষা নিরীক্ষা হল আমার রান্নাঘরে। ধীরে ধীরে অদ্ভুত এই সবুজ সবজিটির নানা পদের রহস্য উদ্ঘাটন হল।
আসলে যে দেশের যে সবজি, সেই সবজিকে সেই দেশের মতো করে রান্না করলেই তার আসল স্বাদ খোলে। অবশ্য ব্রকলি এশিয়ারও সবজি, ভারতের অনেক অংশে খুবই ব্রকলি চাষ হয়, কিন্তু, ভারতীয় রান্নায় এর ব্যবহার খুব একটা না হলেও – চাইনিজ রান্নায় খুবই ব্রকলির ব্যবহার হয়। সয়া সস, আদা – রসুন কুচি দিয়ে ব্রকলি সেদ্ধ চিকেন চাউমিন বা চাইনিজ ফ্রাইড রাইসের সঙ্গে চমৎকার যায়।
তাছাড়া, ব্রকলি স্যুপ! শুধু মাত্র নুন জলে ব্রকলি সেদ্ধ করে মিক্সিতে পিষে নিয়ে উপরে বাটার ও গোলমরিচ গুড়ো ছড়িয়ে দিয়ে শীতের সন্ধ্যায় পরিবেশনের জন্যে চমৎকার এক পদ। আবার, রোস্ট ব্রকলির উপরে একটু চীজ ছড়িয়ে নিয়েও খেতে মন্দ লাগে না। অনেক রেস্টুরেন্টে আবার স্যালাডের সঙ্গে কাঁচা ব্রকলিও পরিবেশন করে। আসলে ব্রকলির নিজস্ব এক স্বাদ আছে – অত্যাধিক মসলার অত্যাচার বকলি যেন সহ্য করতে পারে না, তাই ব্রকলি খেতে হলে ব্রকলিকে সহজ সরল সাদামাঠা ভাবেই খেতে হয়, উপভোগ করতে হয়।
তাছাড়া, ব্রকলির অন্যান্য উপাদেয় ও স্বাস্থ্যকর গুণের কথা জেনে নিয়ে তো শীতের দেশে ব্রকলি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যোগ করা খুবই দরকারি বলে মনে হয়। বিশেষ করে শীতের দেশে যেখানে শরীরে ভিটামিন ডি খুবই কমে যায়, ও শীতকালে ভিটামিন ডি ট্যাবলেট খেতে হয়। ব্রকলিতে উপস্থিত প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন কে ও ভিটামিন এ শরীরের ভিটামিন ডি মেটাবোলিজমে সাহায্য করে, শরীরে ভিটামিন ডি এর ব্যালেন্স ঠিক করতে সাহায্য করে।
তাছাড়া, সবুজ এই সবজিটির যে আরও কতো গুণ আছে – রক্তের বাজে কোলেস্টরল কমাতে সাহায্য করে, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় আরও কতো কি। সব গুনাগুণ মিলিয়ে নিয়ে ব্রকলি সবজিটি রীতিমত এক স্বাস্থ্যকর সবজি, যাকে ঠিক এড়িয়ে চলা যায় না, ঠিকই রান্নাঘরে ঢুকে যাওয়ার পথ খুঁজে নেয়।