ফরাসী দেশে শীত মানেই গলন্ত চীজের সময় – Raclette খাওয়ার সময়। মিদি পিরিনিসের জমাট ঠাণ্ডায় গরম গরম গলন্ত চীজ বা রেক্লেট নিয়ে আসে এক উষ্ণতার খোঁজ। শীতের শুরু থেকে নিয়ে ক্রিসমাস ও নতুন বছর পর্যন্ত ফ্রান্সে যে কতো কেজি রেক্লেট চীজ বিক্রি হয় তার হিসাব কে রাখে।
শীত এলেই ফরাসীরা তাকে উঠিয়ে রাখা রেক্লেট তৈরির বিশেষ ইলেকট্রিক মেশিনটি নামিয়ে আনে। রেক্লেট তৈরির ইলেকট্রিক মেশিন মাঝখানে রেখে গোল হয়ে বসে, গরম মেশিনের উপরে ছোট্ট ফ্রাইং প্যানে চীজের টুকরো রেখে গলিয়ে নিয়ে, বন্ধুদের সঙ্গে বসে গলন্ত চীজ ও নানা ধরণের সবজি সেদ্ধ খাওয়া ফরাসী খাদ্য সংস্কৃতির এক অঙ্গ।
যখন জাঁকিয়ে শীত পড়ে, ফরাসী বাজার নানা ধরণের নতুন সবজির মায়াজালে বাঁধা পড়ে যায়। মোমের মতো চামড়ার সুন্দর গোল গোল আলু বাজারে ওঠে – আর শুরু হয় সেই নতুন ওঠা আলু সেদ্ধর সঙ্গে রেক্লেট খাওয়ার সময়।
জমাট ঠাণ্ডায় নতুন আলু সেদ্ধর উপরে গলন্ত চীজ ঢেলে খাওয়াই ফরাসী কেতা, ফরাসী উষ্ণতা। রেক্লেটের সঙ্গে শুধু যে আলু সেদ্ধই খাওয়া হয় তা নয় – বেকন, মাশরুম, বা অন্যান্য সবজিও খাওয়া যায়।
শীতে ফরাসীরা সাধারণত শুধু মাত্র রেক্লেট, সবজি ও নতুন আলু সেদ্ধ খাওয়ার জন্যেই নিমন্ত্রণ করে। অবশ্য রেক্লেটের সঙ্গে অন্য কিছু খাওয়াও যায় না, তবে ওয়াইন তো থাকেই। গরুর দুধ থেকে তৈরি এই গলন্ত চীজ খাওয়ার কেতা যে শুধু ফ্রান্সের মিদি পিরেনিস অঞ্চলেই আছে তা নয়, সুইজারল্যান্ডের খাদ্য সংস্কৃতিও পুরোপুরি এই রেক্লেট বা গলন্ত চীজের মোহে বাঁধা পড়ে গেছে।
সেবার ডিসেম্বরের প্রচণ্ড শীতে মিদিপিরেনিস পাহাড় শ্রেণীর কোলে এক ছোট্ট গ্রামে ফরাসী বন্ধুর কাঠের বাড়ীতে রেক্লেট খাওয়ার নিমন্ত্রণ ছিল। বাইরে মাইনাস ডিগ্রি ঠাণ্ডা, প্রচণ্ড তুষার পাত। ঘরের ভেতরে ফায়ার প্লেসে কাঠের আগুন জ্বালিয়েও ঠাণ্ডা কিছুতেই দূর হচ্ছে না। কিন্তু, যখন গোল টেবিলের মাঝে গরম রেক্লেট মেশিন রেখে, উপরে ছোট্ট ফ্রাইং প্যানে চীজ গরম করে, গলন্ত চীজ সহযোগে প্রচুর সবজি, গরম আলু সেদ্ধ খাওয়া শুরু হল – ঠাণ্ডা দূর হতে বেশিক্ষণ লাগলো না।
ফ্রান্সে এসে অনেক ধরণের চীজ খেয়ে অনেকবারই মনে হয়েছিল এই প্রথম ও এই শেষ বার। কিন্তু, রেক্লেটের গলন্ত স্বাদ যেন সবারই মুখে লেগে যায়। তাই প্রতি বছর শীত এলেই নতুন আলু সেদ্ধ সহযোগে রেক্লেট খাওয়ার দিন শুরু হয়, শুরু হয় চীজের স্বাদে উষ্ণতা খোঁজার পালা।