স্প্লিটের ঐতিহাসিক কেন্দ্রে (The Historic Core of Split, Croatia)

ডালমেশিয়ান উপকুলে রোমান সম্রাট Diocletian এর তৈরি চতুর্থ শতাব্দীর মধ্যযুগীয় বিশাল এই প্রাসাদ স্প্লিটের প্রধান ঐতিহাসিক কেন্দ্র। যদিও এই প্রাসাদ সমুদ্রের তীরে রোমান সম্রাটের ছুটি কাটানোর এক জায়গা ছিল, কিন্তু প্রচুর সৈন্য সামন্ত নিয়ে অনেকটা বড় প্রাসাদই ছিল। মধ্যযুগের পরে বহুদিন ধরে রোমান সভ্যতার নিদর্শন এই প্রাসাদ, পশ্চিম ইউরোপের দেশ গুলোর কাছে অজানাই ছিল বলা যায়।

ইউনেস্কো এই শহরকেন্দ্রকে হেরিটেজ ঘোষণা করার বহু আগে থেকেই ক্রোয়েশিয়ার এই ঐতিহাসিক কেন্দ্রটি সুরক্ষিত ও সংরক্ষিতই ছিল। এই প্রাসাদ ক্রোয়েশিয়ার স্থানীয় গর্ব বলা যায়। এই প্রাসাদ শহরের সরু গলি বা প্রাসাদের অর্ধ ভগ্ন ঘর গুলো, আজও ব্যবহার হয়, ব্যবসা বানিজ্য চলে – ঐতিহাসিক রোমান প্রাসাদের গলির পাশে, প্রধান প্রাসাদ চত্বরে প্রচুর কফি শপ ও স্যুভেনিরের দোকান। স্থানীয় ক্রোয়েশিয়ান যুবকরা রোমান সেনার পোশাকে পাহারায় থাকে – ঐতিহাসিক শহর কেন্দ্রের ঐতিহাসিক চরিত্রকে যেন টুরিস্টদের সামনে আরও তুলে ধরে, ইতিহাসকে জীবন্ত করে তোলে।

সম্ভবত, এই প্রাসাদ শহরটিই ইউরোপের রোমান সভ্যতার ভগ্ন প্রাসাদ, যা কিনা আজও সাধারণ মানুষ প্রতিদিন ব্যবসার কাজে ব্যবহার করে। এমনকি, রোমান বেসমেন্ট বা পাতাল ঘর যেখানে বন্দীদের রাখা হত – আজ সেই জায়গা সারি সারি স্যুভেনিরের দোকান। সেখানে যেন এখনো থমকে আছে ঐতিহাসিক বদ্ধ এক হাওয়া, দম চাপা এক সোঁদা গন্ধ।

বিশাল এক কুয়ো যেখানে উপর থেকে বন্দীদের ক্ষুধার্ত সিংহের মুখে ফেলে দেওয়া হোতো – আজ সেখানে সঙ্গীতের আসর বসে। রোমান মূল প্রাসাদের খোলা চত্বরে দুপুরে অভিনিত হয় রোমান যুগের এক ছোট্ট রোমান দৃশ্য, সন্ধ্যায় বসে গানের আসর। এই জায়গার এক অন্যরকম ঐতিহাসিক আদিম আকর্ষণ আছে। এখানের কফি শপে বসে এক কাপ কফি খেয়ে ‘রোমান যুগের ক্যফেতে বসে কফি খেয়েছি’ বলে সারাজীবনই ভাবা যায়।

সাধারণত ইউরোপের অন্যান্য জায়গায় রোমান সভ্যতার প্রাসাদের যে সমস্ত নিদর্শন পাওয়া গেছে – তাঁদের দশা খুবই ভগ্ন, জীর্ণ। রোম ও গ্রীসের কোথাও কোথাও তো শুধুই কয়েকটা থাম। বর্তমান যুগে দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের অযোগ্য – কিন্তু, স্প্লিটের এই রোমান প্রাসাদটির অবস্থা প্রায় অক্ষত, অটুটই বলা যায়, খুবই ভালো ভাবে সংরক্ষিত। তাই ইউরোপিয়ান ইতিহাসের কাছে বা পৃথিবীর কাছে এই প্রাসাদের ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম।

বহু আগে এক সময় যেখানে ক্ষুধার্ত রাগী উন্মত্ত সিংহের ক্রুর সাংঘাতিক গর্জন শোণা যেত, সিংহ ছিঁড়ে দিত মানুষকে, যে জায়গা এক সময় যুদ্ধ বন্দীর রক্তে রাঙা ছিল, যে জায়গা ছিল মানুষের রক্তের জন্যে লালায়িত, ছিল বহু বন্দী মানুষের অশ্রু জলে সিক্ত, আতঙ্কিত, যে জায়গার গলিতে অজস্র মানুষের হাহাকার, ও সেনার পায়ের আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হোতো – আজ সেই জায়গা মানুষের আনন্দ কলাহলের জায়গা, আজ এই জায়গার গলিতে বাজে সঙ্গীত সুর, আজ এই জায়গায় বিশ্বের মানুষ এসে নির্ভয়ে মিশেছে, নির্ভয়ে সঙ্গীতের তালে পা ফেলছে। এখানে এসে এক শান্ত আনন্দময় পৃথিবীর খোঁজ করছে মানুষ – যে পৃথিবীতে থাকবে না ইতিহাসের যুদ্ধ, হানাহানি। শুধু বাজবে সঙ্গীত সুর, আসলে মানুষ তো শান্তিই চায়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Croatia, Europe, Southern-Europe, Travel and tagged , , , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

2 Responses to স্প্লিটের ঐতিহাসিক কেন্দ্রে (The Historic Core of Split, Croatia)

  1. debraj বলেছেন:

    well written accompanied with awesome clicks.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s