প্রতিদিন নিয়ম করে জল দিয়ে যেতাম – তিন বছর কিংবা আরও বেশী সময় কেটে গিয়েছিল, গাছটিতে ফুল আসার কোন নাম গন্ধই ছিল না। ছোট্ট গাছটিকে নিয়ে এসেছিলাম তুলুসের কাকিমার কাছ থেকে, যে কাকিমার কথা আগে অনেকবার উল্লেখ করেছি।
কাকিমা বলেছিলেন – প্রতি বছর ঠিক ক্রিসমাসের আগে এই গাছে ঝেপে ফুল আসে। তাই এই গাছটিকে, ক্রিসমাস ক্যাকটাস বলা হয়। অবশ্য এই গাছের অন্য আরও নাম আছে। কোথাও কোথাও একে হলিডে ক্যাকটাস, থ্যাংকস গিভিং ক্যাকটাস বলেও জানে। ক্যাকটাস অথচ ক্যাকটাসের মতো গায়ে কাঁটা নেই। পাতা জুড়ে জুড়ে যেন গাছটি তৈরি হয়েছে।
কাকিমার বাড়ির ছোট্ট গাছটিতে সত্যিই প্রতিবছর ঝেঁপে ফুল আসতো – গোলাপি ও বেগুনি রঙের মাঝামাঝি রঙের ফুল গুলো দেখতে চমৎকার লাগতো। ঠিক যেন বাল্ব জ্বলে উঠত, ঘরের কোনটিকে উজ্জ্বল করে দিত।
যেহেতু, ক্রিসমাসের সময়ে এই গাছে ফুল আসে – ইউরোপে ক্রিসমাসের গৃহসজ্জায় এই গাছটির ভূমিকা অনেক। তাছাড়া, এই গাছের প্রতিপালন করা খুবই সহজ – নিয়মিত জল দিলেও, খুব কম জল দিতে হয়। আর এই গাছটি পাতা থেকে বংশ বিস্তার করে, আবার পাতা থেকেই ফুলের কুড়ি দেখা যায়। খুব একটা সূর্যের আলোরও প্রয়োজন হয় না। তাই, সাধারণত এই গাছকে ইউরোপের গৃহ সজ্জার এক অন্যতম জনপ্রিয় গাছ বলা হয়।
যেহেতু, আমি আগে কখনো এই ধরণের গাছ দেখিনি, গাছটি নিয়ে প্রথম দিকে বেশ কৌতূহল ছিল। কিন্তু, ফুলের আশায় আশায় যখন কয়েক বছর কেটে গিয়েছিল, গাছটি নিয়ে কৌতূহল কমে গিয়েছিল। ঘরের কোণে এক টুকরো সবুজ গাছ ভেবেই নিয়মিত জল দিয়ে দিতাম।
আলো ঝলমলে, উজ্জ্বল এক ডিসেম্বর সকালে দেখি, গাছের পাতায় এক গোলাপি কুঁড়ি উঁকি দিয়েছে। আর আশ্চর্য করে দিয়ে ঠিক ক্রিসমাসের আগের দিন একটি ফুল ফুটল।
প্রকৃতি আসলে একটু সময় চায়। প্রকৃতি সর্বদাই সঠিক সময়ের অপেক্ষায় থাকে। একটু সময়, একটু ধৈর্য – তারপর প্রকৃতি পরম মমতায় প্রকাশিত হয়। ছোট্ট সেই গোলাপি-বেগুনি ফুলটির ফটো নেওয়ার জন্যে যখন বেলকনির আলোয় নিয়ে গেলাম – হাওয়ার সঙ্গে মাথা দোলাতে দোলাতে ফুলটি যেন আমায় সম্ভাষণ করল। যেন নতুন বছর ও ছুটির শুভেচ্ছা জানাল।