অক্টোবর মানেই তুলুসের সবুজ গাছের পাতায় পাতায় হলুদ কমলা রং লাগার দিন। এই সময় বিকেলের ফুরফুরে হওয়া এক শীত শীত শির শিরে অনুভুতি দেয়। আর ধূসর তীব্র শীত থাবা বসানোর আগে এই রঙিন প্রকৃতির কোলে তুলুস সহ দক্ষিণ ফ্রান্স সেজে ওঠে নানান উৎসব সজ্জায় – কার্নিভ্যাল থেকে শুরু করে অক্টোবর মেলার আয়োজন হয় তুলুস ও মিদি পিরিনিসের নানা অঞ্চলে। পৃথিবীর সব দেশের মানুষই উৎসবের জোয়ারে ভেসে যেতে ভালো বাসে। উৎসব মানুষকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে কাছে টানে। মানুষ মাতে একই ছন্দে।
বছরের নানা সময়ে দক্ষিণ ফ্রান্সের উৎসবের আনন্দের ছোঁয়াচে আমরাও হয়েছি আক্রান্ত। দক্ষিণ ফ্রান্সের কিছু অঞ্চল সহ স্পেনের কিছু অঞ্চল ও ইতালির পুরনো মানুষেরা এক বিশেষ ভাষায় কথা বলে – Occitan ভাষা, যে ভাষা আজ অনেকটাই মৃতপ্রায়। এখন সেই ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে মেট্রোতে স্টেশনের নাম ফ্রেঞ্চে ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে Occitan ভাষাতেও ঘোষণা করে। যারা এই ভাষায় কথা বলে ও যেখানে থাকে, স্থানীয় মানুষেরা এই জায়গাকে আদর করে Occitania বলে। আর সেই অক্সিতানিয়ার অস্তিত্ব জানান দিতে, পৃথিবীর কাছে এই জায়গার বৈচিত্রময় নানান সংস্কৃতির কথা তুলে ধরতে, তুলুস ও মিদিপিরেনিস অঞ্চলের প্রায় কুড়িটা জায়গায় কুড়ি সেপ্টেম্বর থেকে ছাব্বিশ অক্টোবর পর্যন্ত পালন হয় festival Occitania।
এই Occitania উৎসবের মূল সুর নানা ধরণের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও বিশ্ব বোধ। পনেরো বছর আগে এই মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল এই উৎসবের পথ চলা। গল্প বলা, কবিতা পাঠ, গান, লোকসঙ্গীত, বাজনা, সুর, নানান ধরণের মূর্তি সেজে কার্নিভ্যাল, রাস্তায় অভিনয়, নাচ, থিয়েটার, সিনেমা – সবই এই উৎসবের অঙ্গ। প্রায় এক মাস ধরে দক্ষিণ ফ্রান্সের নানা জায়গায় পালন হয় এই উৎসব। আর এই জমজমাট উৎসবে অংশীদার হতে মিদিপিরেনিসের নানা জায়গার স্থানীয় শিল্পীরা তুলুসে আসে। Occitania র নানান জায়গার স্থানীয় সঙ্গীত বাজিয়ে বাজিয়ে কার্নিভ্যাল করে – এক আনন্দে মাতে এখানের মানুষ।
তুলুসে বসবাসের প্রথম বছরের অক্টোবরের এক সন্ধ্যায় ক্যাপিটলের সামনে হঠাৎ-ই festival Occitania র কার্নিভ্যালের ভিড়ের মুখোমুখি হয়ে যাই – প্রথম বার বেশ আশ্চর্য হই আকাশ ছোঁয়া অদ্ভুত মূর্তি গুলোর প্রসেশন দেখে। প্রত্যেক দেশের উৎসব অনুষ্ঠান পালনের এক নিজস্বতা আছে, আছে সুর, ছন্দ, রং। আর, দক্ষিণ ফ্রান্সের এই নিজস্ব বৈচিত্রময় উৎসবের সঙ্গীতের সুর ও ছন্দ আমাদের মতো অনেক বিদেশিকেই বোধহয় কৌতূহলী করেছে। দেখি, রাস্তার পাশে অনেকেই দাঁড়িয়ে কার্নিভ্যালে বাজানো বিশ্ব বোধের সুরে সুরে তাল দিচ্ছে। আমরাও সেই আন্তর্জাতিক জনস্রোতে ও সঙ্গীতের সুরে গা ভাষাই।