নোবেল ব্যাঙ্কয়েট হলে (Nobel Prize banquet hall, Stockholm)

স্টকহোম সেন্ট্রাল ষ্টেশন থেকে বেরিয়ে, সামনেই ব্রিজের ওপাশে Kungsholmen দ্বীপে লাল রঙের এক বড় বিল্ডিং চোখে পড়ে – স্টকহোম সিটি হল বা সুইডিশ ভাষায় বলে Stadshuset হল। সুইডেনের সবচেয়ে বিখ্যাত টুরিস্ট আকর্ষণ।

বছরের এক বিশেষ সময়ে সারা পৃথিবীর প্রচুর বিদ্বান, জ্ঞানী, গুণী, মহৎ মানুষের সমাগম হয় এখানে, তাঁদের মহৎ চিন্তা ধারার আদান প্রদান হয় এখানে। হয় রাজকীয় খাওয়া দাওয়া, পৃথিবীর সমস্ত নামী দামী মানুষ, সাহিত্য, বিজ্ঞানের দুনিয়ার বিখ্যাত প্রভাব শালী ব্যক্তি, সুইডেনের রাজ পরিবারের মানুষের হয় নিমন্ত্রণ। সে এক বিশাল রাজকীয় ব্যাপার। তখন পৃথিবীর সমস্ত দেশের সংবাদ মাধ্যমের নজর থাকে এই সিটি হলে আগত মানুষদের দিকে, ওদের প্রতিটি পদক্ষেপের দিকে, আলোচনার দিকে, খাওয়া দাওয়ার দিকে। কি ছিল সেই ব্যাঙ্কয়েটের মেনু সে নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে বিরাট আলোচনাও হয়।

নিমন্ত্রিত মহান সেই মানুষেরা নিজের নামের সঙ্গে সঙ্গে তার দেশের মহিমাও প্রচার করে – প্রতিবছর বিখ্যাত এই সিটি হল নোবেল জয়ীদের স্বাগত জানায়, ব্যাঙ্কয়েটের আয়োজন করে। নোবেল ব্যাঙ্কয়েটে কি হবে রাজকীয় মেনু সে নিয়ে সেপ্টেম্বর থেকেই পৃথিবীর নামী শেফরা করে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা। যে মেনু নোবেল ফাউন্ডেশনের পছন্দ হয়, তা নাকি খুবই গোপন রাখা হয়, ব্যাঙ্কয়েটের দিনই প্রকাশ হয় সেই মেনু। বিশাল এই ব্যাঙ্কয়েটের মেনুতে থাকে স্ক্যান্ডেনেভিয়ার স্থানীয় খাদ্যের নানান ছোঁয়া। ১৯০১ থেকে শুরু হয়েছিল এই ব্যাঙ্কয়েট, মাঝে হয়ে গেছে দুই বিশ্ব যুদ্ধ। দুই বিশ্ব যুদ্ধের সময় এই রাজকীয় ব্যাঙ্কয়েট বন্ধ ছিল, আর ব্যাঙ্কয়েটে যত খরচ হত সবই তুলে দেওয়া হয়েছিল রেড ক্রসের হাতে।

এখানে নিমন্ত্রিত মানুষ ও তাঁদের কর্ম এক অন্য জগতের গল্প। সেই সব মানুষেরা জীবনের বহু বছর নীরবে, নির্জনে মানব জাতির বিকাশের জন্যে কাজ করে যায় – আর সেই কাজের খুবই সামান্য মূল্যায়ন এই পুরস্কার। সেই সব মানুষের কাজ এই পুরস্কারকেও ছাপিয়ে যায়।

এখানে এসে নোবেল কমিটির এক পোস্টারে যখন দেখি বাঙালির অতি পরিচিত সেই মানুষটির মুখ গর্বিত হই। ভাবি, স্বাধীনতার আগের ভারতবর্ষে সেই সময় রাঙা মাটির দেশে থেকেও সেই মানুষটি দেখেছিল এক স্বাধীন, বিশ্ব ভারতের স্বপ্ন। কেউ তার নোবেল পদকটি চুরি করতে পারে, কিন্তু তার স্বপ্ন, গান, চিন্তা, আদর্শকে তো কেউই চুরি করতে পারে নি – সে যে গ্রথিত মানুষের মনে। সেই মানুষটি এতোই মহান, যে নোবেল কমিটি আবার সেই পদক দিয়েছিল।

সিটি হলের সারি বাঁধা থামে আটকে আছে সকালের হালকা কুয়াশা। হলের পেছনে লেকের পাশে সুদৃশ্য বাগানের গাছেরা অক্টোবরের পাতা ঝরার রঙে রঙিন। লেকের ওপারে দূরে দেখা যায় পুরনো স্টকহোমের আকাশ রেখা। বাগানে নানা ধরণের স্ট্যাচু বাগানকে যেন আরও সুন্দর করেছে। বছরের নানা সময়ে এই সিটি হলের চত্বরে প্রচুর টুরিস্টের আগমন হয়। এখানে প্রতিটি টুরিস্টের পদক্ষেপে যেন এক বিনম্র শ্রদ্ধা দেখা যায়। এখানের বাতাসে যেন থমকে আছে মহান সেই সব মানুষের উপস্থিতির অনুরণন।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Sweden, Travel and tagged , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

2 Responses to নোবেল ব্যাঙ্কয়েট হলে (Nobel Prize banquet hall, Stockholm)

  1. অজ্ঞাত বলেছেন:

    সত্যিই দারুন একটা পোষ্ট। অনেক তথ্য সাথে চমৎকার ছবি।
    শুভেচ্ছা আপনাকে।

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s