পৃথিবীর লক্ষ কোটি মানুষের মধ্যে কিছু মহৎ মানুষ যখন নিজের কাজের মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখে, পৃথিবীর মানব সভ্যতাকে, মানবতাকে এগিয়ে দেওয়ার প্রয়াস করে, তখন তাঁদের কাজের সম্মান জানায় এই মহৎ পুরস্কার। আর সেই মহৎ সম্মানকে জড়িয়ে সমস্ত মানুষের কীর্তিকে, নোবেল পুরষ্কার স্রষ্টা অ্যালফ্রেড নোবেলের জীবনী, কর্ম ও ইতিহাসকে সযত্নে সাজিয়ে রাখে স্টকহোমের এই নোবেল মিউজিয়াম।
স্টকহোম শহরের পুরনো Gamla Stan অঞ্চলের Stortorget স্কোয়ারের এক পাশে এই মিউজিয়াম স্টকহোমের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ – শুধু টুরিস্ট নয়, প্রচুর ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষামূলক ভ্রমণের আয়োজনও করে এই মিউজিয়াম। নোবেল সম্বন্ধে খুঁটিনাটি সবই জানায় সেই গাইডেড ট্যুর।
১৯০১ থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত, সমস্ত নোবেল জয়ীদের স্মৃতি, তথ্য ধরে রেখেছে এই মিউজিয়াম। নানা দেশের মানুষ, নোবেল মিউজিয়ামে এসে নিজের দেশের নোবেল বিজয়ীকে দেখার আশা করে। নোবেল পুরস্কার শুরুর সময় থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত সমস্ত নোবেল বিজয়ীর পোস্টার ও ছবির ভিড়ে নিজের দেশের নায়ককে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। আমরাও সেই মহান মানুষের ভিড়ে আমাদের দেশের প্রথম নোবেল বিজয়ীকে খুঁজতে চেষ্টা করি – ঋষি সুলভ সেই মানুষ যার সৃষ্টি ছাড়া বাঙালি অচল, তাঁকে দেখে গর্বিত হই।
আসলে Stortorget স্কোয়ারের এই বিল্ডিং আগে স্টকহোমের স্টক এক্সচেঞ্জ ছিল। মিউজিয়ামের ভেতরে ছোট ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ আছে – নোবেল মিউজিয়ামের ট্যুর সেরে নিয়ে অনেকেই এই কফি কাপে চুমুক দেয়। Stortorget স্কোয়ারের মধ্যে এক পুরনো দিনের কুয়োকে ঘিরে সুন্দর ভাবে ফুল গাছ দিয়ে সাজানো, শীতের সকালের এক মনোরম পরিবেশে চারিদিকের ছোট ক্যাফে ও রেস্তোরাঁয় প্রচুর কৌতূহলী ছাত্র ছাত্রী ও টুরিস্টদের ভিড়।
মনে হয়, এই মিউজিয়ামের ভেতরে দাঁড়ানো শুধু যে এক টুরিস্ট আকর্ষণ তা নয়, এই জায়গা নিজের দেশের অস্ত্বিত্বের এক মহানুভুতি বোধ দেয়। মহান মানুষেরা লোক চক্ষুর আড়ালে সব দেশেই নিরন্তর ভাবে নিজের কাজ করে চলেছেন। মহান কাজ, মহৎ সৃষ্টি তো সব দেশে সব জায়গায় হয়, কিন্তু তাকে স্বীকার করে নিয়ে বিশ্ব দরবারে জায়গা করে নেওয়াও যে এক মহান পুরস্কার। এখানে এসে সেই কর্মযোগী মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধায় বিনম্র হয় মন।