গত কয়েকশো বছর ধরে এই শহরের মানুষের জীবন যাত্রার সঙ্গে, ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা স্থাপত্য, চার্চ, ক্যাথিড্রাল। তুলুসের Cathédrale Saint-Étienne তেমনি এক প্রাচীন স্থাপত্য। গত পাঁচশো বছর ধরে এই রোমান ক্যাথোলিক ক্যাথিড্রাল গড়ে উঠেছে। এই ক্যাথিড্রালের গঠন শৈলীতে মিশে গেছে গথিক ও রোমান স্থাপত্য শিল্প। মধ্য যুগের ভিতের উপরে তৈরি উঁচু গথিক চূড়া ইতিহাসের নানা সময়ের চিহ্ন বহন করে। মূলত ইতিহাসের নানা সময় ধরে তৈরি দুই অসম্পূর্ণ চার্চের সমন্বয় এই ক্যাথিড্রাল – সেজন্যে এই চার্চের ভেতর ও বাইরের গঠন শৈলীতে একটু অসামঞ্জ্যস্য আছে। আর সেই জন্যেই তুলুসে এসে এই ক্যাথিড্রালের চত্বরে না এসে, এই বিশালতার সামনে না দাঁড়িয়ে কোন টুরিস্ট ফিরে যায় না।
অবশ্য তুলুস শহর কেন্দ্রের মধ্যে অবস্থিত ফ্রান্সের ন্যাশনাল মনুমেন্ট – বিশাল এই ক্যাথিড্রালকে ঠিক এড়িয়েও যাওয়া যায় না, চোখে পড়বেই। ঐতিহাসিক গাম্ভীর্যপূর্ণ বিশাল এই ক্যাথিড্রাল সহজেই তার পুরনো আভিজাত্য দিয়ে তুলুসের নবাগতদের কৌতূহলী করে তোলে। কাজে অকাজে কতবার যে এই ক্যাথিড্রালের পাশ দিয়ে যেতে হয় – কিছু দিনের মধ্যেই তার হিসাব বুঝি বা আর থাকে না।
শনি রবিবারে এই ক্যাথিড্রালের চত্বরে পুরনো বই, এন্টিক জিনিসের হাট বসে। হাটের সেই পুরনো এন্টিক জিনিস গুলোর মধ্যে যেন উঠে আসে এই শহরের মানুষের জীবন ইতিহাস। ক্যাথিড্রালের ঠিক উল্টো দিকের রাস্তাটি চলে গেছে শহরের মধ্যে। রাস্তার দু’ পাশে কাফে রেস্টুরেন্টে বসে এক কাপ কফিতে চুমুক দিতে দিতে তুলুস বাসীর শনি রবিবারের সকাল গড়ায়। তুলুসে আসার কিছুদিনের মধ্যেই বিশাল এই স্থাপত্যের উপস্থিতি এতো স্বাভাবিক, সহজ ও সাধারণ হয়ে ওঠে যে তুলুস জীবনের এক অঙ্গ হয়ে ওঠে এই ক্যাথিড্রালের উপস্থিতি।
ক্রিসমাস ইভে বিশাল এই ক্যাথিড্রালের পাশে হেঁটে যেতে যেতে কানে আসে ক্যারলের সুরেলা সুর। সেই সুরের আমন্ত্রণে আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই ডিসেম্বরের শীতের রাতে উষ্ণ ক্যাথিড্রালের ভেতরে পা রাখে, আলো আঁধারিময় এক অদ্ভুত অচেনা প্রাচীন পরিবেশে ক্রিসমাস ইভ কেটে যায়।