যে কোন দেশের ধর্মীয় স্থাপত্য গুলো সর্বদাই জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। ইউরোপের যে কোন শহরের চার্চ ক্যাথিড্রালের গায়ে জড়িয়ে আছে অনেক যুগের সংস্কৃতি, শিল্প, ইতিহাসের সাক্ষ্য। বহু কালের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ইউরোপের চার্চ ক্যাথিড্রাল গুলো পৃথিবীর যে কোন মানুষের জন্যে খুলে দিয়েছে তার অবাধ দরজা।
তাই, খুব সকাল সকাল ব্রাসেলসের পথে অক্টোবরের ঠাণ্ডায় যখন ঝেঁপে বৃষ্টি এলো, মাথা বাঁচাতে দৌড়ে নবম শতাব্দীতে তৈরি, ব্রাসেলসের এই রোমান ক্যাথোলিক ক্যাথিড্রালে ঢুকে পড়তে কোন দ্বিধা হয় না। তাছাড়া অনেক সময়, বাইরের ঠাণ্ডা ও বৃষ্টি থেকে বেঁচে ক্যাথিড্রালের ভেতরের উষ্ণতার মধ্যে, নির্জনতার মধ্যে কিছুক্ষণ কাটাতে বেশ ভালোই লাগে।
ব্রাসেলস শহরটি বেশ উঁচু নিচু আর শহরের মধ্যেই Treurenberg পাহাড়ের ঢালে এই ক্যাথিড্রাল, অথচ বাইরে যতই শহুরে কোলাহল হোক না কেন ক্যাথিড্রালের ভেতরে কিন্তু, অপার এক শান্তি বিরাজমান। শুধু ব্রাসেলসের এই ক্যাথিড্রাল বলে নয়, ইউরোপের অনেক শহরের ক্যাথিড্রালের ভেতরেই দেখেছি বাইরের কোন আওয়াজ শোনা যায় না।
যুগ যুগ ধরে ধর্মের কোষাগারেই জমা হয়েছে যে কোন দেশ ও জাতির ধন দৌলত আর সেই অপার ঐশ্বর্যের অলংকার নিয়ে সেজে উঠেছে নানা ধর্মের নানা স্থাপত্য। ব্রাসেলসের এই ক্যাথিড্রালও নানা সময়ে নানা রাজার অবদানে গড়ে উঠেছে। প্রায় তিনশো বছর ধরে নানা সময়ের ধন দৌলতের অবদানে আজকের এই ক্যাথিড্রাল সম্পূর্ণ ভাবে গড়ে উঠেছে। যে চার্চ সম্পূর্ণ হতে তিনশো বছর সময় লেগেছে সেই চার্চের ভেতরে তো বহু যুগের, অতীতের বহু সময়ের বাতাস থমকে থাকবেই, জড়িয়ে আছে কত যুগের রহস্য।
এক আধো অন্ধকারে সেই তিনশো বছরের আবছায়াময় ইতিহাসের নিদর্শনের সামনে দাঁড়িয়ে এক শীতল অনুভূতি হয়। বিশাল বিশাল কাঁচের জানালার উপরে আঁকা যীশুর জীবনের নানা ঘটনায় আলো পড়ে, সুন্দর ছবি তৈরি হয়। এই চার্চ ক্যাথোলিক – তাই ভেতরে থামের দু’ধারে ও নানা জায়গায় অনেক সেন্তের মূর্তি এই চার্চের অলংকার। এই সকালে চার্চে খুব একটা ভিড় নেই। কেউ কেউ এসে সামনের দিকের বেঞ্চিতে চুপ করে প্রার্থনা সেরে নিচ্ছে, কেউ বা মেরীর মূর্তির সামনে জ্বালিয়ে দিচ্ছে মোম বাতি। মোমের কম্পমান শিখায় এক শান্ত সকালের সূচনা করে চলেছে ওরা নিজের কাজে।