ব্রাসেলসের এটোমিয়াম (Atomium, Brussels, Belgium)

ইউরোপের রাজধানী ব্রাসেলসের আরেক বিখ্যাত ও উদ্ভট প্রতীক বিশালাকারের এক আয়রন ক্রিস্টেলের অবয়ব – এটোমিয়াম। ব্রাসেলসের শহর কেন্দ্র থেকে ট্রেনে মাত্র কুড়ি মিনিটের দূরত্বে ১৯৫৮ র বিশ্ব মেলা উপলক্ষ্যে ষ্টীলের তৈরি, একশো দুই মিটার উচ্চতার এই কিম্ভূতকিমাকার স্থাপত্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

ট্রেনে এটোমিয়ামের উদ্দেশ্যে যেতে যেতে দূর থেকেই দেখা যায় এই বিশালাকার স্থাপত্যের চকচকে বিশাল গোলক গুলো। ষ্টেশন থেকে বেরিয়ে একটু হেঁটেই বিশাল আকারের এই এটোমিয়ামের মুখোমুখি হই।

বিশ্ব মেলার পরেই এই আয়রন ক্রিস্টেলের অবয়বকে সরিয়ে দেওয়ারই পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু বিশ্বের পর্যটকদের কাছে এই অদ্ভুত আধুনিক স্থাপত্যের কদর বেড়ে যাওয়ায় ও প্রচণ্ড জনপ্রিয় হয়ে যাওয়ায় প্রদর্শনী হিসাবে রেখে দেওয়া হয় এই স্থাপত্যকে। আজ ব্রাসেলসের এক ল্যান্ডমার্ক এই এটোমিয়াম। ব্রাসেলসে এসে এটোমিয়ামকে না দেখে কেউ ফিরে যায় না।

অক্টোবরের হিম শীতল দিনে আকাশের মুখ সেদিন ছিল গোমড়া, তাই ঐ গোলক গুলোর উপরে সূর্যালোকের প্রতিফলন দেখা যায় নি, মেঘলা দিনে নিজস্ব উজ্জ্বলতা নিয়েই দাঁড়িয়েছিল সেই এটোমিয়াম।

আসল আয়রন ক্রিস্টেলকে একশো পঁয়ষট্টি বিলিয়ন গুণ বড় করলে যে আকার হয় তারই নীচে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুবই ক্ষুদ্র বলে মনে হয়। শুনেছি উজ্জ্বল দিনে নীল আকশের নীচে গোলক গুলোর উপরে সূর্যালোকের প্রতিফলনে চোখ ধাঁধিয়ে যায়।

ষ্টীলের তৈরি বিশাল গোলক গুলো আবার একে ওপরের সঙ্গে চলমান সিঁড়ি ও লিফট দিয়ে যুক্ত – টিকিট কেটে নিয়ে কয়েকটা গোলকের ভেতরে টুরিস্টদের অবাধ যাতায়াত, এক গোলক থেকে আরেক গোলকে চলে যাওয়া যায় অনায়াসে। তবে, প্রচুর ভিড় থাকলে অনেকক্ষণ দাঁড়াতে হয় ভিড়ের পেছনে। আর ভিড় থাকেই, প্রচুর টুরিস্ট বাস এখানেই এসে থামে।

উজ্জ্বল দিনে আকাশ পরিষ্কার থাকলে একদম উপরের গোলকটি থেকে দেখা যায় ব্রাসেলস শহরের বিস্তারিত দৃশ্য। এই এটোমিয়ামকে ঘিরে বিশাল এক পার্ক এই জায়গার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। বছরের নানা সময়ে নানা ধরণের ফুলে সাজানো এই পার্ক ব্রাসেলসবাসীর এক অবসর বিনোদনের জায়গা। এটোমিয়ামর নীচের পার্কে এই মেঘলা দিনেও টুরিস্টদের জন্যে নানা ধরণের আয়োজনে জায়গাটা বেশ সরগরম হয়ে আছে।

প্র্যত্যেক সৃষ্টির পেছনেই মানুষের মনের দার্শনিকতা, বিশালতা, উদারতা, সৃষ্টিশীলতা কাজ করে। আর সেই মহান সৃষ্টি কালের কষ্টিপাথরে নিজেকে প্রমান করে আগত প্রজন্মের জন্যে রয়ে যায়। সৃষ্টি বহন করে চলে স্রষ্টার সত্তাকে, আর আমরা সেই স্রষ্টা ও তার মহান সৃষ্টিকে সম্মান জানিয়ে ফিরি নিজের পথে। সঙ্গে নিয়ে ফিরি এক বিস্ময় অনুভূতি।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Belgium, Europe, Travel and tagged , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

2 Responses to ব্রাসেলসের এটোমিয়াম (Atomium, Brussels, Belgium)

  1. pradipjuly বলেছেন:

    Very nice narrative as if a piece of Art.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s