ব্রাসেলস শহরে এসে গলির গলি তস্য গলি ঘুরে এক গলির মোড়ে যখন ‘ম্যনকেন পিস্’ স্ট্যাচুটির সামনে এলাম – রেগে যাব, না হাসবো ভেবে পেলাম না। ঐ পুঁচকে স্ট্যাচুর জন্যে ব্রাসেলস বাসীর এতো আদিখ্যেতা? একটু হলেই তো, ছোট্ট এই স্ট্যাচুটিকে ছাড়িয়েই চলে যেতাম।
শুধু দূর থেকে কল কাকলি পূর্ণ প্রচুর জাপানি টুরিস্ট দলের হাসি মুখে দাঁড়িয়ে ফটো তোলা দেখে মনে হচ্ছিল নিশ্চয় ওখানে কোন এক দ্রষ্টব্য জিনিস আছে। অবশ্য, জাপানিরা যা দেখে তারই ফটো তোলে। অনেক সময়ই এমনও হয়েছে পেছনে জাপানি টুরিস্ট দলের সামনে আমি হয়তো দাঁড়িয়ে কোন কিছুর ফটো তুলছি – দেখি পেছনে ওরাও দলে দলে সেই জিনিসেরই ফটো তুলে নিচ্ছে। ইউরোপের পর্যটন শিল্পকে মনে হয় জাপানিরাই সম্বৃদ্ধ করেছে, ইউরোপের যেখানেই গেছি জাপানি টুরিস্টদের ভিড়ে হারিয়ে গেছি। আবার কোথাও গিয়ে জাপানি টুরিস্ট না দেখলেও কেমন যেন খালি খালি লেগেছে।
যাইহোক, শুনেছিলাম ব্রাসেলসের মানুষ কৌতুক প্রিয়। তা বলে ‘ম্যনকেন পিস্’ এর কৌতুক আমার খুব একটা পছন্দ হল না। ইউরোপের যে কোন জায়গার রাস্তার মোড়ে, চত্বরে – চব্বিশ ইঞ্চি আকারের এই ধরণের ব্রোঞ্জের মূর্তি প্রচুর ছড়িয়ে আছে। আসলে কোন এক ছোট্ট জিনিসকে ঐতিহাসিক গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বের পর্যটকদের কাছে পরিবেশন করতে ইউরোপিয়ানদের জুড়ি মেলা ভার। এই ছোট্ট মূর্তিটির সামনে নাকি সারা বছরই টুরিস্টের ভিড় লেগে থাকে, কখনই স্ট্যাচুটিকে খালি পাওয়া যায় না।
টুরিস্ট ইনফরমেশন অফিসে বলে দিয়েছে – এই ছোট্ট মূর্তিটি নাকি ব্রাসেলসের ল্যান্ডমার্ক। হেসে মরি আর কি। সতেরো শতকে স্থাপিত এই ছোট্ট মূর্তিটিকে ঘিরে এখানে নানান গল্প গাঁথা প্রচলিত। বিশেষ করে নানা টুরিস্ট গাইডদের মুখে মুখে এই ব্রোঞ্জ স্ট্যাচুটির মহিমা প্রচার হয়েছে, ওদের মুখে মুখে এই মূর্তিটিকে ঘিরে নানান গল্প নানা রূপ নিয়েছে।
সতেরো শতাব্দী থেকেই নাকি এই মূর্তিটিকে নানা পোশাকে সাজানো হয় – শহরের মিউজিয়ামে ওর পোশাকের সংগ্রহ প্রদর্শিত হয়। প্রায় কয়েকশো ধরণের পোশাকে ওর পোশাক আলমারি সাজানো। এখনো বিশেষ দিনে এই ছোট্ট মূর্তিটিকে নানান পোশাকে সাজানো হয়, কখনো ক্যারাটের পোশাকে কখনো সেনা নায়কের পোশাকে। গ্রিলের পাশে এক লিস্ট টাঙ্গানো আছে – বছরের কোন সময়ে কোন পোশাকে ম্যনকেন পিস্ কে সাজানো হয়। অবশ্য বেশীরভাগ সময়ে ‘ম্যনকেন পিস্’ পোশাক না পরেই থাকে।
এই গলির মোড়ে যত স্যুভেনিরের দোকান সবাই নানা আকারের ‘ম্যনকেন পিস্’ স্ট্যাচু বিক্রি করছে। অনেকেই হাতে তুলে নিচ্ছে ছোট ‘ম্যনকেন পিস্’ এর স্যুভেনির। বেলজিয়ামের কৌতুকপ্রিয়তার নিদর্শন অনেকেই নিয়ে যেতে চায় নিজের সঙ্গে।
এ আর নতুন কি। মনে পড়ে কি আপনার নেহাত ঝুল বোর সিনেমা দেখে পুরো হোস্টেল কে পাঠিয়ে দেওয়া সেই রকম আর কি।
haan, thiki, ja bolechen.