এই শহরে নতুন ও পুরনো সময় পাশাপাশি বাস করে। যেমন, এক দিকে ঝাঁ চকচকে শহুরে আধুনিকতা আরেকদিকে এক প্রাচীন সময়ের থমকে থাকা – এই দুই নিয়েই বার্সিলোনা স্বয়ংসম্পূর্ণ। বার্সিলোনা শহরের এক অংশ জুড়ে আছে পুরনো দিনের Gothic Quarter।শহরের এই অংশে কোবল স্টোনে বাঁধানো গলি পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে যাই মধ্যযুগের তৈরি স্থাপত্যের ভিড়ে। অনেক স্থাপত্য আবার রোমান সময়ের তৈরি।
যদিও বার্সিলোনা সরকার উনিশ শতক ও কুড়ি শতকে প্রচুর প্রাচীন স্থাপত্যের সংরক্ষণ করে, বার্সিলোনার এই অংশকে সম্পূর্ণ ঐতিহাসিক রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা করেছে। বার্সিলোনার নানান ঐতিহাসিক নিদর্শনের সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যিকরণের বেশীর ভাগ কাজ 1929 Barcelona International Exposition এর সময় হয়েছিল।
এখানের প্রাচীন সরু গলিতে এক পুরনো গন্ধ, পুরনো পরিবেশ। পৃথিবীর নানা কোণ থেকে টুরিস্ট এই পুরনো গলিতে হারিয়ে যেতেই যেন বার বার আসে। ঐতিহাসিক এই গলি পথে অনেকেই মিউজিক বাজিয়ে সামনে টুপি রেখে ভিক্ষা করে, আর সেই মিউজিক যেন এই গলি পথকে আরও বেশী শ্রুতি মধুর করে তোলে, জায়গাটাকে যেন প্রান দেয় সেই সুর। সাধারণ ভাবেই এক জনের বাজনার সুরের সঙ্গে আরেক জনের অন্য বাজনার সুর মিলে যেন এক নতুন সুর সৃষ্টি হয়। আর সেই সুরের আবেশ এই ঐতিহাসিক গলি পথকে যেন মুগ্ধ করে রাখে, গমগমে করে।
বর্তমানে এই গথিক Quarter এর ঐতিহাসিকতা নিয়ে বিতর্ক চলছে। আন্তর্জাতিক টুরিস্টদের জন্যে ইতিহাসের পাতা সাজাতে গিয়ে হয়তো ইতিহাসের অনেক নিদর্শনকে পালটেই দিয়েছে নবীন সময় – কে তার খোঁজ রাখে। এখানে রোমান স্থাপত্যের পাশেই অত্যাধুনিক স্থাপত্য দাঁড়িয়ে সময়ের জয়গান গায়।
গথিক Quarter এর গলি খুঁজি দিয়ে চলতে চলতে দেখতে দেখতে এক খোলা চত্বরে এসে, সামনেই চোখে পড়ে গথিক ক্যাথিড্রাল ‘Santa Eulàlia’, গথিক স্থাপত্য মানেই আকাশ মুখী তিনকোণা ছুঁচলো চূড়া। প্রাচীন এই ক্যাথিড্রালে বর্তমানে সংরক্ষণের কাজ চলছে, তাই এর সারা গায়ে লোহার জালি।
রবিবারের সকালে ক্যাথিড্রালের খোলা চত্বরে একদল ছেলে মেয়ে মিউজিক সহ স্প্যানিশ গান গাইছে। প্রচুর মানুষ ভিড় করে সেই গান শুনছে। সোনালি উজ্জ্বল ছুটির সকালে এই গান পরিবেশে যেন এক যাদু ছড়ি বুলিয়ে দিয়েছে। পথ চলা ভুলে দু’ দন্ড সেই সুরের বাঁধনে বাঁধা পড়ে যাই।