কোন রেল ষ্টেশন যে টুরিস্ট গন্ত্যব্যের তালিকায় থাকতে পারে তা ভাবি নি। কিন্তু, এখানে পরতো শহর কেন্দ্রে রেল ষ্টেশন ‘São Bento’ তে এসে দেখি, এ যে শিল্পীর আঁকা বিশাল এক ক্যানভাস। সাদা টাইলসে নীল ছবিতে পর্তুগালের ইতিহাস, পর্তুগালের যুদ্ধ Battle of Valdevez এর ছবি আঁকা।
মুরিশরা প্রথম পর্তুগাল ও স্পেনে এই ধরণের টাইলস ব্যবহারের সূচনা করে। মুরিশরা সাধারণত টাইলসে মোটিফ বা ডিজাইন তৈরি করতো, কোন গল্প বা ইতিহাস আঁকত না। পর্তুগীজরা Azulejo টাইলসে নিজেদের শিল্পী মনের পরিচয় দিয়ে নিজেদের ইতিহাস এঁকেছে, গল্প এঁকেছে। পর্তুগালে এই ধরণের টাইলস শিল্পের প্রচলন প্রায় পাঁচশো বছর ধরে হয়ে আসছে।
পর্তুগাল ও স্পেনে অতীতের নানান স্থাপত্যের দেওয়ালে এই ধরণের টাইলস শিল্প দেখা যায়। তবে, আজও পর্তুগালের সংস্কৃতিতে এই টাইলস শিল্প অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে আছে। এই ধরণের টাইলসের আবার এক বিশেষ নামও আছে ‘Azulejo’। স্প্যানিশ ও পর্তুগীজরা যেখানে গেছে এই Azulejoটাইলস শিল্প নিজেদের সঙ্গে নিয়ে গেছে। পর্তুগালের নানা রেলস্টেশন, চার্চ, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে নানা জায়গায় এই Azulejo শিল্প দেখা যায়।
পরতোর রেলষ্টেশন ‘São Bento’ র দেওয়ালে প্রায় কুড়ি হাজার টাইলসের উপরে পর্তুগালের ইতিহাসের যুদ্ধের ছবি, King John I ওPhilippa of Lancaster এর পরতো আসার দৃশ্য, প্রাকৃতিক দৃশ্য, অতীতের প্রতিদিনের গ্রাম্য জীবন যাপনের ছবি আঁকা।
১৯০৫ থেকে ১৯১৬ পর্যন্ত এই টাইলস ছবি আঁকা হয়েছে। তখনকার সময়ের বিখ্যাত পর্তুগীজ Azulejo শিল্পী Jorge Colaçoর আঁকা এই অপূর্ব দেওয়াল ছবি দেখতে বহু মানুষ রেল যাত্রার দরকার না থাকলেও এই ষ্টেশনে একবার আসেই। দেওয়ালের টাইলস ছবি এতো নিখুঁত যে, যুদ্ধের দৃশ্যের অতি সুক্ষ ডিটেলস ও টাইলসে ধরা পড়েছে।
পর্তুগীজরা শুধু যে সৌন্দর্যের জন্যে এই ধরণের টাইলস ব্যবহার করে তা নয়, এই টাইলসের এক বিশেষ গুণ আছে – যেমন, এই ধরণের টাইলস তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই পর্তুগীজরা অনেকে আজও ঘরের দেওয়াল, ছাদ, মেঝে এই ধরণের টাইলস দিয়ে মুড়ে দেয়।
জুলাইয়ের পড়ন্ত দুপুরে অনেকেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ‘São Bento’ রেল ষ্টেশনের দেওয়াল শিল্পে যেন ডুবে গেছে। ট্রেন আসে যায়, গন্ত্যব্যে ফিরে যাই। কিন্তু, যাওয়া আসার পথে সেই সুন্দর ‘São Bento’ ষ্টেশনের ছবি যে মনে রয়ে যায়।